বায়ুমন্ডল ATMOSPHERE
বায়ুমন্ডল (ATMOSPHERE)। পানির মত বায়ুও আমাদের কাছে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। কথায় বলে ‘প্রাণবায়ু’। বায়ুর সঙ্গে প্রাণের নিবিড় যোগ। বায়ু না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের বিকাশ কিছুতেই সম্ভব হত না। বলা যায়, মাছ রকম পানিতে ডুবে থাকে আমরাও তেমনি বায়ুর মধ্যে ডুবে আছি। আমাদের আশেপাশে যত ফাঁকা জায়গা আমরা দেখতে পাচ্ছি সর্বত্রই বাতাস রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে বায়ুর এই বিস্তার ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মাইল উপর পর্যন্ত। ৬০০ মাইলেরও উপরে বায়ুর অস্তিত্ব আছে তবে তার ঘনত্ব অত্যন্ত কম।
Related: প্রযুক্তিগত ধ্যান ধারণার আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিক করুন।
ভূপৃষ্ঠে বায়ুমন্ডলের (ATMOSPHERE) চাপ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৪.৭ পাউন্ড! বায়ুর এই চাপ এক বর্গফুটে প্রায় এক টনের মত।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের উপর চাপ সাড়ে চৌদ্দ টনের মত। তার মানে আমাদের মাথার ওপর কয়েকটি হাতির ভার চাপানো আছে ধরে রাখতে পার। অসম্ভব এই বোঝা নিয়ে আমরা যে দিব্যি হেসে খেলে বেড়াচ্ছি, তার কারণ আমাদের শরীরেও বায়ু আছে আর সেই বায়ু বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বাইরের বাতাসের চাপ একটু কম হলে বা না থাকলে আমাদের পক্ষে বেঁচে থাকাই মুশকিল হত। ভেতরের বাতাসের প্রচণ্ড চাপে আমদের শরীর ফেটে চৌচির হয়ে যেত। সে কারণে খুব উঁচু কোন পাহাড়ে উঠলে—সেখানে বাতাসের চাপ একটু কম – আপনা থেকেই নাক মুখ ফেটে রক্ত পড়তে থাকে।
বায়ুমন্ডল (ATMOSPHERE) সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান কিন্তু খুব বেশিদিনের পুরোনো নয়। ১৯৩৫ সালে আমেরিকা থেকে স্টিভেনসন ও এন্ডারসন নামের দুজন বিজ্ঞানী বেলুনে করে আকাশের ১৩ মাইল ওপরে উঠেছিলেন। তাঁদের আগে আরো অনেক বিজ্ঞানী বেলুনে করে আকাশে উঠে বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন এ কথা সত্য, কিন্তু তাঁরাই প্রথম বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য আহরণ করতে সমর্থ হন। তারপর আরো অনেক সাহসী ব্যক্তি এন্ডারসন ও স্টিভেনসনের চাইতে আরো বেশি উঁচুতে উঠে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন। পরিশেষে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রকেট ও কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে প্রায় সমস্ত তথ্যই আহরণ করা সম্ভব হয়েছে।
Related: মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিক করুন।
বিজ্ঞানীরা এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বায়ুমন্ডলকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছেন। প্রথম ভাগের নাম ট্রোপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধস্তর। ভূপৃষ্ঠ থেকে বারো থেকে পনেরো বা কুড়ি কিলোমিটার পর্যন্ত এর বিস্তার। এখানকার বায়ু বেশিরভাগ সময় বিক্ষুব্ধ থাকে বলে এই নাম। এই স্তরেই বায়ু প্রায় নব্বই ভাগ জমা হয়ে আছে। পৃথিবীপৃষ্ঠে পড়ে সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত হয় বলে এই স্তরের বায়ু সব সময়েই কম বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তপ্ত বায়ু পদার্থের স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী উপরে ওঠে যায়, আর উপরের শীতল বায়ু নিচে নেমে আসে। ফলে সব সময়েই বায়ুর একটা স্রোত তৈরি হচ্ছে যার থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ঝড় ঝঞ্ঝা প্রভৃতি।
ক্ষুব্ধস্তরের পরেই শুরু হচ্ছে বায়ুর দ্বিতীয় স্তর স্ট্যাটোস্ফিয়ার বা স্তব্ধস্তর।
স্তব্ধস্তরে মেঘ বৃষ্টি ঝড় ঝঞ্ঝা ব্জ্রপাত কিছুই নেই। সেখানে বিরাজ করছে অখণ্ড নীরবতা। তাছাড়া সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয় না বলে সেখানের আকাশও নিবিড় অন্ধকারে ঢাকা। তাপমাত্রা শূণ্যের ৬০ ডিগ্রী নিচে। স্তব্ধস্তরের ঠিক ওপরেই আছে ওজোন গ্যাসের পর্দা। সূর্যের অতি-বেগুনী রশ্মি এই ওজোন গ্যাসের পর্দায় এসে আটকে যায়, পৃতিবী পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। জীবজগতের পক্ষে অতি-বেগুনী রশ্মি অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওজোন গ্যাস তা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করছে।
বায়ুমন্ডলের (ATMOSPHERE) সবচেয়ে ওপরের স্তরটির নাম আয়নোস্ফিয়ার বা আয়নমণ্ডল। স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওপর থেকে শুরু করে কয়েক শত মাইল উঁচুর দিকে এর বিস্তার। এই স্তরের বায়ুমণ্ডলের উপাদানের পরমাণুগুলো আয়নিত অর্থাৎ ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে- তাই এই নাম। আয়নমণ্ডলের একটি বৈশিষ্ট হল, পৃথিবী থেকে প্রেরিত বেতার তরঙ্গ ঐ স্তরে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় ফিড়ে আসে পৃথিবীতে। যার ফলে আমরা ঘরে বসে রেডিও মারফত দেশ বিদেশের খবর শুনতে পাই!!!
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।