মহাকর্ষের বিশেষ উদাহরণ হলো (GRAVITY) মাধ্যাকর্ষণ বা অভিকর্ষ যার কারণে ভূপৃষ্ঠের উপরস্থ সকল বস্তু ভূকেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয়। মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবেই উপরিস্থিত বা ঝুলন্ত বস্তু মুক্ত হলে ভূপৃষ্টে পতিত হয়। মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ভরসম্পন্ন বস্তুসমূহে ওজন অনুভূত হয়। একটি বস্তুর ভর যত বেশি হয়, মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে তার ওজনও তত বেশি বিজ্ঞানী নিউটন সর্বপ্রথম মহাকর্ষ বলের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত।
মাধ্যাকর্ষণ
আধুনিক পদার্থবিদ্যায় মহাকর্ষ সবচেয়ে সঠিক আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব ( আইনস্টাইন দ্বারা প্রস্তাবিত) দ্বারা বর্ণনা করা হয়।
আইনস্টাইনের মতে স্থান-কালের বক্রতার কারণেই মহাকর্ষ বল সৃষ্টি হয়। এই মাধ্যাকর্ষণ (GRAVITY) শক্তি থাকার কারণেই মানুষ পৃথিবীর ওপর চলাফেরা করতে পারছে, বৃষ্টির পানি নিচে মাটিতে আসে, গাছের ফল জমিনে পড়ে, বাতাস পৃথিবীর সাথে লেগে থাকে। শুধু তাই নয়, পৃথিবী হতে কোন বস্তুর দুরত্ব যতই বাড়তে থাকে ততই তার ওজন কমতে থাকে। আর যদি (GRAVITY) মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ব্যবস্থা মহান স্রষ্টা না করতেন তবে পৃথিবীর সবকিছু মহাশূন্যে হারিয়ে যেত, তা আর পাওয়া যেত না। এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে বলেই পৃথিবীর বিশাল বিশাল মহাসাগরের পানি ছিটকে বাইরে চলে আসে না। মহাসাগরগুলো পৃথিবীর উপরিভাগেই আছে।
তুমি হয়তো ভাববে এতে করে তো পানি ছিটকে পরে যাওয়ার কথা। কিন্তু এমনটি হয়না কারণ, পৃথিবী সবকিছুকে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। এর ফলে পানিও ভূমির সাথে সংলগ্ন থাকে, ছিটকে পড়ে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আকাশের দিকে কোন ঢিল ছুঁড়ে দিলে তা একসময় মাটিতে নেমে আসে। এর একমাত্র কারণ, পৃথিবীর আকর্ষণ বল। যদি এই আকর্ষণ না থাকতো, তবে সবকিছুই পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ত।
Related: প্রযুক্তিগত ধ্যান ধারণার আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিক করুন।
মাধ্যাকর্ষণ বল কাকে বলে ?
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আর একটি শক্তি সম্পর্কে জেনে নেয়া ভাল। সেটা হলো অভিকর্ষজ বল। অভিকর্ষজ বল হলো পৃথিবী তার কেন্দ্রাভিমুখে উপরস্থ সকল বস্তুকে যে বলে আকর্ষণ করে সেই বল। সর্বপ্রথম নিউটন অভিকর্ষজ বল সম্পর্কে ধারনা দিয়েছিলেন। কথিত আছে, একদিন নিউটন আপেল গাছের নিচে বসে ভাবছিলেন, এমন সময় তার মাথায় একটি আপেল এসে পড়ে।
আপেলটি কেন মাটিতে পড়ল এই নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেই তিনি অভিকর্ষ বা মহাকর্ষ বল সম্পর্কে ধারনা লাভ করেন। এই সৌরজগতের যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ বল কাজ করে তাকে মহাকর্ষীয় বল বলে। আর এই দুটি বস্তুর মধ্যে একটি যদি পৃথিবী হয় তখনি এই বলকে অভিকর্ষজ বল বলে। অভিকর্ষজ বল “মাধ্যাকর্ষণ শক্তি” নামেও সাধারণের কাছে পরিচিত, যদিও বল ও শক্তি এক জিনিস নয়। সুতরাং অভিকর্ষ বল মহাকর্ষ বলের একটি অংশ। বিশ্বে যে চার প্রকারের মৌলিক বল রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো মহাকর্ষীয় বল। এই মহকর্ষীয় বল আবিষ্কার করেছেন মহবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন।
স্যার আইজ্যাক নিউটিন একদিন একটা বাগানে বসেছিলেন। হঠাত তিনি লক্ষ্য করলেন, গাছ থেকে একটা আপেল খসে পড়ে মাটিতে পড়লো। তিনি এক অদ্ভুত ভাবনা শুরু করলেন- আপেলটি উপরের দিকে না গিয়ে নিচের দিকে পড়ল কেন? এই ভাবনা ক্রমেই ফলপ্রসূ হয়ে উঠলো। আইজ্যাক নিউটিন আবিষ্কার করলেন এটা হলো, পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি। এই শক্তির জোড়েই আমরা বল, ঢিল যা কিছু উপরের দিকে ছুঁড়ি না কেন, সব নিচে নেমে আসে।
১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের একটি ছোট্ট গ্রামে নিউটনের জন্ম হয়। পিতৃহারা ও মায়ের দ্বারা পরিত্যক্ত নিউটন তাঁর দাদির কাছেই মানুষ হতে থকেন। তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। ছোটবেলায় তিনি লেখাপড়ায় খুব ভাল ছিলেন না। তবে নানারকম খেলনা ও যন্ত্রপাতি তৈরিতে তিনি খুব ওস্তাদ ছিলেন। ঐ সময়ে তিনি একটি ছোট্ট ময়দার কল তৈরি করেন। তাতে অল্প পরিমাণে গম ভাঙিয়ে ময়দা তৈরি করা যেতো।
ঐ সময়েই নিউটন জলঘড়ি ও সূর্যঘড়ি তৈরি করেন।
জলঘড়িতে পানির ফোঁটা ফেলে এবং সূর্যঘড়িতে সূর্যেরকিরণে সময় দেখা চলতো। এখনো লন্ডনের রয়েল সোসাইটিতে সেই সূর্যঘড়িটি সযত্নে রক্ষিত আছে। মা এবার নিউটনকে নিজের কাছে এনে গোলাবাড়ি দেখাশোনার ভার দিলেন। কিন্তু একাজে নিউটনের মন বসলো না তখন আবার তাঁকে স্কুলে এবং পরে কলেজে পড়াশোনার জন্যে পাঠানো হল। গণিত ও বিজ্ঞানের দিকে দেখা দিল তাঁর বিশেষ মনোযোগ। বিজ্ঞানসাধক নিউটন আলোকের ওপর গবেষণা শুরু করলেন। সেই গবেষণার ফলেই তিনি বুঝতে পারলেন যে, সূর্যের আলো সাদা।
ঐ সাদা রঙের সঙ্গে লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, গাঢ় নীল, বেগুনি- এই সাতটি বিভিন্ন রঙের আলো মিশে আছে। এবার নিউটন দূরবীন যন্ত্রের অনেক উন্নতি সাধন করলেন এবং অবশেষে আবিষ্কার করলেন মাধ্যাকর্ষণ (GRAVITY) শক্তি। গাছ থেকে ফল নিচের দিকে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন- পৃথিবী সব জিনিসকেই তার কান্দ্রের দিকে টানছে বলেই এমনটা ঘটে থাকে।
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।