রেডিও আবিষ্কার সম্পর্কে মানুষ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর রেডিও সম্পর্কে মিথ্যাটাই জানে।
তাহলে রেডিও কে আবিষ্কার করেন ? মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে যেসব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বিষেশভাবে অবদান রেখেছে তাদের মধ্যে অন্যতম রেডিও আবিষ্কার। বিনা তারে এক স্থান হতে অন্য স্থানে মানুষের মুখের কথাকে অপরিবর্তিত অবস্থায় প্রেরণ করার প্রযুক্তির নামই হচ্ছে রেডিও। রেডিওর শব্দ পাঠানোকে বলা হয় ব্রডকাস্টিং। রেডিও স্টেশন থেকে ব্রডকাস্ট করা হয়, তাকে বলে ট্রন্সমিট। আগেকার দিনে বেতার এখনকার মত সরাসরি কতাবার্তা বলতে পারত না।
আজকাল রেডিও সেটের চাইতে ট্রনজিস্টার অনেক গ্রহণযোগ্য। তার প্রধান কারণ ট্রনজিস্টার খুবই ছোট বলে যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়। এখন ঘরে বসে সুদূর আমেরিকা, লন্ডন, চীন, জাপান থেকে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনতে পাওয়া সম্ভব। শব্দ প্রচারের ক্ষেত্রে দূরত্ব এখন আর কোন বাধাই নয়। অথচ একসময় এই শব্দ পনের মাইল দূরে পাঠানো সম্ভব করার জন্যে নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে দিতে পারতেন বিজ্ঞানীরা। এবার আমরা জেনে নিই কিভাবে এবং কেমন করে এই প্রযুক্তির এতোটা উন্নতি সাধন হলো। তাহলে রেডিও কে আবিষ্কার করেন ?
Related: ট্রানজিস্টর এর কাজ কি এবং ট্রানজিস্টর কিভাবে সুইচিং হিসেবে কাজ করে।
রেডিও বা বেতারযন্ত্রের অন্যতম উদ্ভাবক হিসাবে যার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে- তিনি হলেন স্যার গুলিয়েলমো মার্কোনি। গুলিয়েলমো মার্কোনি ১৮৭৪ সালের ২৫শে এপ্রিল ইতালির বোলোনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষাপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ছিলেন না। তার পিতা ছিলেন ইতালির একজন ধনী ব্যবসায়ী। সাত বছর বয়সে কিছু দিনের জন্য মার্কোনি স্কুলে গিয়েছিলেন এবং তার পর থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেন, স্ফুলিঙ্গ থেকে যে শব্দতরঙ্গের সৃষ্টি হয় তা বিনা তারেই কিছু দূর যেতে পারে। গুলিয়েলমো মার্কোনি ( এপ্রিল ২৫, ১৮৭৪ – জুলাই ২০, ১৯৩৭ ) ছিলেন ইতালীয় উদ্ভাবক এবং প্রকৌশলী যিনি বেতের যন্ত্রের সম্প্রচার পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি একটি ব্যবহারিক রেডিওগ্রাফ পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। এই উদ্ভাবনকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের অসংখ্য ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ১৯০৯ সালে কার্ল ফের্ডিনান্ড ব্রাউনের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরুস্কার লাভ করেন। বেতার সম্প্রচার পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপনের জন্যই তাদেরকে এই পুরুস্কার দেওয়া হয়।
রেডিও কে আবিষ্কার করেন ,রেডিও আবিষ্কারের গোড়ার কথা।
রেডিও কে আবিষ্কার করেন তার আগে জেনে নেই শব্দ সম্পর্কে। শব্দকে একত্রিত করে শ্রবণযোগ্য করার কাজে ব্যবহৃত হয় গ্রাহক যন্ত্র। সুতরাং তোমার বাড়িতে যে রেডিও আছে সেটা তুমি শুধু শুনতেই পাবে- তার মাধ্যমে কোনো শব্দ প্রেরণ করতে পারবে না। আজকে আমাদের সামনে যে ছোট্ট বেতার গ্রাহক যন্ত্র বা রেডিও দেখতে পাই- গোড়ার দিকে এই রেডিও এতো ছোট্ট যন্ত্র ছিল না। বর্তমানে একটি আধুনিক বেতার গ্রাহক যন্ত্র হাতের তালুতেই রাখতে পারা যায়। কিন্তু শুরুতে যেসব বেতার গ্রাহক আর প্রেরক যন্ত্র তৈরি হতো- সেগুলো দেখলে আমাদের চোখ উল্টে যেত নিঃসন্দেহে।
Related: মাধ্যাকর্ষণ বল কাকে বলে ?
ইয়া বড়ো বড়ো সব যন্ত্রপাতি দিয়ে ঘ্যাম সাইজের রেডিও তৈরি করা হতো। আর সেইসব যন্র দিয়ে দশ থেকে বারো মাইলের বেশি শব্দ বা কথা প্রেরণ করা যেত না। তাছাড়া, সেইসব বেতার যন্ত্রে ব্যবহৃত হতো ইয়া বড়ো বড়ো ভাল্ব।
এগুলো এমন গরম হয়ে উঠতো যে, ঠান্ডা পানির ধারা দিয়ে সেগুলোকে ঠান্ডা করতে হতো। তা নাহলে অত্যধিক গরম হওয়ার কারণে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। দৃশ্যটা কল্পনা করলে কেমন লাগবে? একটি বিশাল সাইজের রডিওতে সামনে বসে কোন শ্রোতা গান শুনছে। ইতিমধ্যে রেডিও-র মধ্যকার ভাল্ব গরম হয়ে সেখান থেকে ধোঁয়া উঠছে- আর একসময় শ্রোতা হাতে একটা ঠান্ডা পানির পাত্র নিয়ে সেই ভাল্বের উপর পানির ধারা প্রবাহিত করছে। অসম্ভব একটা কল্পনা তাই না ?
এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান ইটালির মার্কোনি সাহেবের। ১৮৯৬ সালে বেতার তরঙ্গের সাহায্যে তিনি ইংলিশ চ্যানেলের এপার থেকে ওপারে শব্দ পাঠিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ভারতবর্ষের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুও এই বিষয়ে আশ্চার্য পরীক্ষা করেছিলেন। বিদ্যুৎ তরঙ্গের সাহায্যে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে একটা পিস্তলের আওয়াজ তুলে দেখিয়ে দেখা গেল যে পরের মাধ্যম ছাড়াও বেতার তরঙ্গ শব্দ দেখানো যায়।
খুব অল্প বয়স থেকেই শুরু হয় তার গবেষণার কাজ। তিনি চার তলায় একটি ঘরে বসে বোতাম টিপে নীচতলার একটি বেল বাজিয়ে ফেললেন যেখানে তারের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
রেডিও সম্পর্কে একটা অজানা তথ্য হলো, মার্কোনি রেডিও আবিষ্কার করার আগেই আমাদের দেশের বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন কিন্তু তিনি স্বীকৃতি নিতে পারেন না।
তবে তাদের সেই অসমাপ্ত কাজকে সাফল্যের দিকে ধাবিত করে বিজ্ঞানী মার্কোনি অমর হয়ে আছেন। সম্প্রতি জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথম বেতার আবিষ্কারক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ১৯১২ সালে Institute of Electrical and Electronics Engineers স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে রেডিও আবিষ্কারক স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে। স্বীকৃতি স্বরূপ জগদীশ বসুর স্মরণে তারা কলকাতায় একটা মাইল ফলক স্থাপন করেছে। প্রসঙ্গত এশিয়ার টোকিও ছাড়া কলকাতাই হলো দ্বিতীয় ষর যেখানে এই মাইল ফলক স্থাপন করা হয়েছে। আর মার্কোনির নাতি কয়েক দিন আগে কলকাতায় বেড়াতে আসলে তিনিও স্বীকার করে নেন জগদীশ চন্দ্র বসুর রেডিও আবিষ্কারক হিসাবে।
১৮৬৪ সালের দিকে- রেডিও আবিষ্কারের তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছিলেন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সয়েল নামের একজন অঙ্কশাস্ত্রের প্রতিভাবান বিজ্ঞানী। তিনি বলেছিলেন, বিদ্যুৎ তরঙ্গের অস্তিত্ব আছে। এই তত্ত্ব থেকে পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন বেতার তরঙ্গের কথা। এই তত্ত্ব আবিষ্কারেরপর এর উপর ভিত্তি করে ম্যাক্সওয়েল বেতার তরঙ্গের প্রকৃতি ও গুণাগুণ, বেতার তরঙ্গের দ্রুতি ও বেতার তরঙ্গের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করতে সমর্থ হন। তবে তিনি এটা প্রমাণ করতে পারেননি বলে তত্ত্বটির প্রতি কেউই তেমন উৎসাহী হয় নি। ম্যাক্সওয়েলের এই কথা পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত না হওয়ায় কেউই তাঁর তত্ত্বকে সম্মান করেনি বরং তাঁকে বিদ্রূপ করেছে। তবে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে এলেন বিখ্যাত জার্মান পদার্থবিদ হেনরিখ রুডলফ হার্জ। পরবর্তীতে তাঁর এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এক জার্মানী পদার্থবিদ হেনরিখ রুডলফ হার্জ বেতার তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এই সম্পর্কে নতুন কিছু তত্ত্বও আবিষ্কার করেন তিনি। মানুষ বুঝতে পারে বেতার তরঙ্গ নামে কোনকিছুর অস্তিত্ব আছে। চেষ্টা করলে, এই তরঙ্গের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বেতার সংকেত পাঠানো সম্ভব হবে। গবেষণা চলতে থাকে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মধ্যে। এই সময় মার্কোনির বয়স ছিল মাত্র পনের বছর। মার্কোনি তাঁর গৃহশিক্ষকদের কাছ থেকে ব্যপারটা বুঝে নেন। সেই তখন থেকেই তিনি এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করতে থাকেন। তিনি ছিলেন ধনী ঘরের ছেলে। তাই বাড়িতে বসেই শিক্ষকদের কাছ থেকে পড়তেন। ১৮৯৫ সালে নিজের বাড়িতে বসে পরীক্ষা চালান।
Related: টেলিভিশন আবিষ্কার করেন কে – ১ম পর্ব।
পুরনো সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু করেন মার্কোনি। প্রথমে তিনি বেতার সংকেতের কার্যকরী পদ্ধতি তৈরি করেন। ১৮৯৫ সালের শেষের দিকে তিনি বাড়িতে একটি গবেষণাগার তৈরি করে পুরোনো কিছু জিনিসপত্র নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথমে তিনি বেতার সংকেত প্রেরক এবং গ্রাহক যন্ত্র তৈরি করেন। একসময় তিনি তাঁর প্রেরক যন্ত্র থেকে এক মাইল দূরে বেতারবার্তা পাঠাতে সমর্থ হন। ১৮৯৬ সালে এই দূরত্ব দাঁড়ায় দুই মাইলে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই তাঁর উদ্ভাবিত প্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে দশ মাইল দূরের গ্রাহক যন্ত্রে শব্দ প্রেরণ করা সম্ভব হয়। মার্কোনি প্রমাণ করে দেখান- উপযুক্ত প্রেরক যন্ত্র বসানো সম্ভব হলে এর চেয়েও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে শব্দ তরঙ্গ।
মার্কোনি তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত যন্ত্রের সাহায্যে এক মাইল দূরে বেতারবার্তা পাথাতে পারেন। ১৮৯৬ সালে তিনি দুই মাইল দূরত্বে বেতারবার্তা পাঠাতে পারেন, মার্কোনি তাঁর এই আবিষ্কারের কথা ইতালি সরকারকে জানালেন।
কিন্তু ইতালি সরকার এই ক্ষুদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের প্রতি তেমন আগ্রহ না দেখানোর ফলে মার্কোনি পিতার উৎসাহে অনেকটা বাধ্য হয়েই ইংল্যান্ডে চলে যান।
গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কোনি বিশ বছর বয়সে মার্কিন বিজ্ঞানী হার্জের একটা প্রবন্ধ থেকে জানতে পারেন যে, সদ্যপ্রয়াত এক বৈজ্ঞানিক এমন একটা বৈদ্যুতিক যন্ত্র বের করতে পেরেছেন, যার সাহায্যে ঘরের একদিক থেকে প্রেরিত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বিনা তারে ঘরের অন্যদিকে আগুনের ফুলকি জ্বালিয়ে দেয়।
মার্কোনি হার্জের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরীর চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকলেন। মার্কোনির কাজ শুরু হলো লন্ডন জেনারেল পোস্ট অফিসের একটি কক্ষ থেকে পাশের বাড়ির কাছে বার্তা প্রেরণর মধ্য দিয়ে। একনিষ্ঠ অধ্যাবসায় ও গবেষণায় তিনি এমন একটা যন্ত্র তৈরি কলেন যার মাধ্যমে এক মাইল পর্যন্ত বিনা তারে সংকেত পাঠানো সম্ভব। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল আটলান্টিকের এপার থেকে ৩৩৭৮ কিলোমিটার দূরে ওপারে বার্তা প্রেরণ।
অতঃপর ১৮৯৯ সালে ইংলিশ চ্যানেলের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত বিনা তারে সংবাদ আদান-প্রদান করতে সক্ষম হন মার্কোনি। সেকালের বিজ্ঞানীরা অনভিজ্ঞ মার্কোনির এ স্বপ্নের সফলতা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেন এই ভেবে যে, ভূপৃষ্ঠের বক্রতার জন্য বহু দূরবর্তী অঞ্চলে এ ধরনের বার্তা পাঠানো সম্ভব নয়।
কিন্তু তিনি এ অসম্ভবকে সম্ভব করলেন ১৯০১ সালে এবং আটলান্টিকের এপার থেকে ওপারে বেতারসঙ্কেত পাঠাতে সক্ষম হলেন। তাঁর সাফল্য ছিল মানবজাতির জন্য যুগান্তকারী। এভাবেই মার্কোনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তার বিহীন সংযোগ (বেতার) স্থাপন করেন। বেতার হলো তার ব্যতীত যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। রেডিও (বেতার), টেলিভিশন (দূরদর্শন), মোবাইল ফোন ইত্যাদিসহ তারবিহীন যেকোন যোগাযোগের মূলনীতিই হল বেতার। বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয় বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রেডিও টেলিস্কোপ। এতে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে দ্রুতগতিতে মার্কোনি আবিষ্কৃত বেতারযন্ত্রের ব্যবহার বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
ঊনবিংশ শতাব্দির শেষপ্রান্তে অনেক দেশের বিজ্ঞানী প্রায় একই সময়ে বেতার আবিষ্কার করলেও গুগলিয়েলমো মার্কোনিকেই বেতারের আবিষ্কারক হিসাবে ধরা হয়। পূর্বে শুধু রেডিওতে ব্যবহার হলেও বর্তমানে বেতার প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে সর্বত্র। তাহলে রেডিও কে আবিষ্কার করেন বুঝা গেল।
১৯০৯ সালে সরকার কর্তৃক তিনি সম্মানিত হন এবং ইতালি সরকার তাঁকে আজীবন সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে। ১৯০৯ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মার্কোনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন (তিনি কার্ল ব্রাউন এর সাথে যুগ্মভাবে এ পুরস্কার পান)।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মার্কোনি ইতালীয় বেতার-সার্ভিসের কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে ইটালীর তৎকালীন রাজা তাঁকে ‘ মারকুইস ‘ খেতাব দান করেন। অবশ্য মার্কোনির আগেও ম্যাক্সওয়েল, হার্তস কেলভিন, বাঙালী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, আলেক্সান্দর পপোভ প্রমুখ বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করে গেছেন।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্যদের তালিকায় রয়েছেন ইংল্যান্ডের আলিভার নাজ, রাশিয়ার আলেকজান্ডার পোপোভ, ভারতের জগদীশচন্দ্র বসো, সত্যেন বোস আরো অনেক বিজ্ঞানী।
ইতালির অগাস্টো রিঘি তখন বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। একবার আলোর সংকেতদাতা ইস্ট গুডইউন নামের একটি জাহাজ ডুবে যাচ্ছিল। এই জাহাজে মার্কোনি উদ্ভাবিত বেতার প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্র বসানো ছিল। সেই যন্ত্র দিয়ে বেতারবার্তা পাঠানো হলো লাইটহাউসে, সাথে সাথে নৌকা পাঠিয়ে নাবিকদের জীবন বাঁচানো হল। এরপরই জয়জয়কার পড়ে গেল এই বেতার যন্ত্রের। উৎসাহী বিজ্ঞানীরাও ঝুঁকে পড়লেন এই যন্ত্রের আরো নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের দিকে।
এরপর ইংলিশ চ্যানেলের এপার থেকে ওপারে বেতার যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তারপর মার্কোনি আটলান্টিক মহাসাগরের এপার থেকে ওপারে বেতারবার্তা পাঠানোর কাজে লেগে যান। ১৯০১ সালের ১২ ডিসেম্ব্র তিনি সফল হন।
১৯০৫ সালে বেতার যন্ত্রের আরো উন্নতি ঘটে। বেতার গ্রাহক যন্ত্রের সমস্ত অসুবিধাগুলো দূর হয়ে যায়। ১৯১১ সাল থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে বেতারবার্তা পাঠানোর পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়। যার ফলে তখনই আসল রেডিও তৈরি হয়।
Related: Telephone ( টেলিফোন )-মার্গারেট হেলো নামে Alexander Graham Bell এর girlfriend ছিল না
১৮৯৫ সাল থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে মার্কোনি প্রচুর পুরস্কার ও সম্মান পান। ১৯০১ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান। তাঁকে ‘ দি মার্কিন ‘-এ ভুষিত করা হয়।
১৯৩৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। মার্কোনির মৃত্যুর পর তাঁর আবিষ্কৃত বেতার যন্ত্রের আরও উন্নতি সাধিত হতে থাকে।
মার্কোনির সময়ে আবিষ্কৃত বেতার প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্রগুলো ছিল আকারে বেশ বড়ো এবং নির্মাণ খরচ ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে এই যন্ত্রের মধ্যে ব্যবহার করা হতো এক বিশেষ ধরনের ভাল্ব। এগুলোর নির্মাণ খরচ ছিল যেমন বেশি- ঠিক তেমনই এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করাও বেশ কষ্টসাধয ছিল। খুব দ্রুত এগুলো গরম হয়ে যেত। এ কারণে এই যন্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের উৎসাহ থাকলেও খরচের বিশালত্বের দিক বিবেচনা করে এগুলোর ব্যপক প্রসার বাধাগ্রস্থ হতে থাকে।
এই ভাল্বের বিকল্প কিছু খঁজতে শুরু করলেন বিজ্ঞানীরা। আরও কম খরচে কিভাবে এই যন্ত্রের উন্নতি সাধন করা যায়- সেদিকে দৃষ্টি দিলেন তাঁরা। ১৯৩৭ সালে মার্কোনির মৃত্যুর পর এই গবেষণা আরও বিস্তার লাভ করে।
১৯৫১ সালের দিকে অর্ধপরিবাহী জার্মেনিয়ামকে রেডিও-র ভাল্ব হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে এর নির্মাণ খরচ কমে আসে অনেক। জার্মেনিয়াম হচ্ছে অত্যন্ত বিশুদ্ধ একটি পদার্থ। এই জার্মেনিয়ামকে রেডিও ভাল্বের বিকল্প জিনিস অর্থাৎ ট্রানজিস্টার নাম দেওয়া হলো। ছোট্ট একটুকরো জার্মেনিয়ামের সাহায্যে তৈরি হতে থাকলো ট্রানজিস্টার। পরবর্তীতে সিলিকন আবিষ্কারের পর ট্রানজিস্টার তৈরীতে ব্যবহৃত হতে থাকলো এই ধাতুটি। কম খরচে তৈরি হতে লাগলো রেডিও। শব্দ প্রেরণের ক্ষেত্রে দূরত্ব আর কোন বাধা হিসেবে থাকলো না কৌতূহলী মানুষের সামনে। আমরা জানলাম রেডিও কে আবিষ্কার করেন।
পরবর্তীতে এই রেডিও-র হাত ধরেই মানুষ কথার পাশাপাশি পাঠাতে সক্ষম হয় ছবি। অর্থাৎ আবিষ্কৃত হয় টেলিভিশন।
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।
No Responses