কম্পিউটার (Computer) একটি বড় আকারের যুক্তিনির্ভর ইলেকট্রনিক যন্ত্র (Electronic Machine)। একে বড় আকারের ক্যালকুলেটর (Calculator)বা গণনাকারী যন্ত্রও বলা যেতে পারে। কারণ কম্পিউটার তার যাবতীয় কর্মকান্ড গণনার মাধ্যমেই সম্পন্ন করে থাকে। তবে ক্যালকুলেটরের এর প্রধান পার্থক্য হলো এই যে, যে কোন পরিমাণের সংখ্যাবিত্তিক বা আক্ষরিক তথ্যসমূহ কম্পিউটারে প্রবেশ করালে কম্পিউটারের অভ্যন্তরে আগে থেকে প্রদেয় গাণিতিক যুক্তির সাহায্যে কম্পিউটার সুনির্দিষ্ট, সুনিপুণ, সুক্ষ্ম ও নির্ভুল ফলাফল অত্যন্ত দ্রুততার সাথে প্রদর্শন করতে পারে এবং প্রয়োজনে উক্ত তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। এই কাজটি সাধারণ ক্যালকুলেটরের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে যে কোন ধরনের ফলাফল নির্দেশের জন্য কম্পিউটারে আগে থেকে কিছু নির্দেশনা দেয়া থাকে। যার ভিত্তিতে সুক্ষ্ম যুক্তিযুক্ত গাণিতিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কম্পিউটার কার্য সম্পাদন করে থাকে।
কম্পিউটারের নামকরণ
কম্পিউটার নামটি এসেছে গ্রীক ভাষা কম্পিউট (Compute) নামক শব্দ থেকে। মূলত এই শব্দের অর্থ হলো গণনা করা। সুতরাং এই হিসেবে নামকরণের সার্থকতার কারণেই কম্পিউটারকে বড় আকারের গণনাযন্ত্র বা ক্যালকুলেটিং মেশিন হিসেবেও আখ্যা দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া, কম্পিউটার আবিষ্কারের গবেষণায় জানা গেছে আজকের অতি আধুনিক গণনাযন্ত্রের মূল ধারণার বিকাশ ঘটেছে এ্যাবাকাস (Abacus) নামক এক ধরণের গণনাযন্ত্র থেকে। এই যন্ত্রটি আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে চীন দেশে গণনা কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো।
কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম
আজকে আমাদের টেবিলের উপর যে পার্সোন্যাল কম্পিউটার যন্ত্রটি কাজের জন্য উপযুক্ত অবস্থায় অপেক্ষা করছে- সেটা বর্তমান অবস্থায় আসতে অতিক্রম করেছে কয়েক হাজার বছর। কম্পিউটারকে যদি গণকযন্ত্রবা ক্যালকুলেটরের উত্তরসুরী ধরা হয়- তাহলে এর সূত্রপাত হয়েছে আজ থেকে হাজার তিনেক বছর আগে চীন দেশে। সেই সময় চীন দেশে হিসাব নিকাশের জন্য ব্যবহৃত হতো হাতে তৈরি এক ধরনের ক্যালকুলেটর- যার নাম এ্যাবাকাস (Abacus)।
এটাই মূলত মানুষ আবিষ্কৃত প্রথম গণনাযন্ত্র। এ্যাবাকাস পরিচালনা করতে যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো না- মানুষ হাত এবং মাথা খাটিয়ে এই যন্ত্র দিয়ে মোটামুটি নির্ভুলভাবে হিসাবের কাজ করতো। মূলত গণিতের অনেক জটিল বিষয়ের হিসাবও এই এ্যাবাকাস যন্ত্রের সাহায্যে করা হত। পৃথিবীবিখ্যাত গণিতবিদরা এক সময়ে এ্যাবাকাসের উপর নির্ভর করে বিশাল বিশাল সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। পরবর্তীতে শত শত বছরের গবেষণা আর বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হলো ক্যালকুলেটর বা যন্ত্রগণক। এর আরও অনেক পরে আবিষ্কৃত হয়েছে বড় যন্ত্রগণক বা কম্পিউটার।
Related: ট্রানজিষ্টর ভেঙ্গে যে তথ্য বের হল
এ্যাবাকাস হলো গ্রীক শব্দ। এর অর্থ হলো গণনা যন্ত্র। এই এ্যাবাকাস থেকেই ক্যালকুলেটরের চিন্তা-ভাবনা এসেছে মানুষের মাথায়। এ্যাবাকাসে অনেকগুলো গোলাকৃতি ছোট পাথর লম্বালম্বি দন্ডের সাথে যুক্ত থাকতো। দন্ডগুলোর সাথে যুক্ত এই গোলাকৃতি পাথরগুলো ঘোরানো বা উপর-নিচ করা যায়। আমি আগেই বলেছি, এ্যাবাকাসের মধ্যে থাকে দুটো চেম্বার। উপরের চেম্বারে থাকে ১০টি দণ্ড লম্বালম্বিভাবে লাগানো। প্রতিটি দন্ডে ৫টি করে গোলাকৃতি পাথর মাঝামাঝি ছিদ্র করে পরানো থাকে।
নিচের চেম্বারে থাকে ১০টি দন্ড-তবে এই অংশের দন্ডগুলোতে পরানো থাকে ২টি করে গোলাকৃতি পাথর। উপরের চেম্বার আর নিচের চেম্বারের বল্গুলোর সমন্বয়ে উক্ত পাথরগুলো ঘুরিয়ে বা উপর-নিচ করে গণনাকার্য করা হতো। এতে সময় লাগতো বেশী কিন্তুহিসাবের কাজ হতো নিখুঁত। এখনও এ্যাবাকাসের ব্যবহার রয়েছে চীন সহ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে।
এই এ্যাবাকাস থেকেই ক্যালকুলেটরের জন্ম। ল্যাটিন ভাষায় ক্যালকুলাস (Calculus) শব্দের অর্থ হলো ছোট পাথর। যেহেতু এ্যাবাকাসে এই ধরনের ছোট পাথরের সাহায্যে হিসাব নিকাশের কাজ করা হতো-তাই এ্যাবাকাসের উদ্ভবের পর ল্যাটিন শব্দ ক্যালকুলাস সহযোগে ক্যালকুলেটর (Calculator) নাম দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরন অ প্রকৃতির ক্যালকুলেটর আবিষ্কৃত হয়রছে। এই ক্যালকুলেটর প্রযুক্তির উদ্ভাবনাকে কেন্দ্র করে আরও বড় বড় হিসাব নিকাশের যৌক্তিক চাহিদার প্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে কম্পিউটার আবিষ্কার অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
কম্পিউটারের ধারাবাহিক আবিষ্কার
বিশেষজ্ঞদের মতে এ্যাবাকাস হলো ক্যালকুলেটরের প্রথম প্রজন্ম। তার পরবর্তী প্রজন্ম হলো ক্যালকুলেটর আর তার পরের প্রজন্মে ক্যালকুলেটর থেকে কম্পিউটারের জন্ম। এ্যাকাস থেকে ক্যালকুলেটরের জন্ম সম্পর্কে প্রথম চিন্তাভাবনা করেন একজন ফরাসী আবিষ্কারক- নাম স্যার ব্লায়াস প্যাসকেল। সময়টা ছিল ইংরেজি ১৬৪৫ খ্রীষ্টাব্দ। তিনি উক্ত এ্যাবাকাস যন্ত্রের একটি উন্নত সংস্করণ তৈরি করেন।
এই যন্ত্রে এ্যাবাকাসের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে এতে পাথরের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছিল দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ার (Gear)। এই গিয়ারগুলো ঘুরিয়ে হিসাবের কাজ করা হতো। স্যার ব্লায়াস উক্ত গণনা যন্ত্রটির নাম দিয়েছিলেন প্যাসকেলাইন (Pascaline)।
এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৫০ বছর। আনুমানিক ১৬৯৪ সালের দিকে স্টেপড রেকোনার (Stapped Reckoner) নামের একটি উন্নত মানের গণনাযন্ত্র বানিয়ে ফেললেন এক জার্মানী বিজ্ঞানী স্যার গটফ্রেড উইলহেম ভন লেইবনিজ (Sir Gotfried Wilhem Von Leibniz)। এই যন্ত্রটি দিয়ে অনেক বড় বড় হিসাবের কাজ করা যেতো।
এরপর পেরিয়ে গেল আরও প্রায় ১২৫ বছর। আনুমানিক ১৮২০ সালের গোড়ার দিকে আরেক জার্মানী বিজ্ঞানী টমাস দ্যা কোমার (Thomas de Colmar) লেইবনিজের ঐ যন্ত্রটির আরও একটু উন্নত সংস্করণ তৈরি করেন।
এর মাত্র বছর তিনেক পর ১৮২৩ সালের মাঝামাঝি সমস্ত বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে সত্যিকার কম্পিউটারের সূত্রপাত ঘটালেন এক ইংরেজ অংকশাস্ত্রবিদ স্যার চার্লস ব্যাবেজ (Sir Charles Babbage, ১৭৯২-১৮৭১)। তিনি অংকের বিভিন্ন তথ্যকে সহজে সমাধান করার জন্য তোইরি করলেন ভিন্ন মাত্রার গণনাযন্ত্র এই যন্ত্রের তিনি নামকরণ করলেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine) নামে। এই যন্ত্রটিকে আরও গ্রহণযোগ্য করার জন্য বুদ্ধি খাটিয়ে তিনটি অংশ (Store, Mill, Control) যোগ করলেন স্যার চার্লস ব্যাবেজ।
Related: ইনটিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি-এর ব্যবহার ও মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কার
তখন এটার নাম দেয়া হলো এ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন (Analytical Engine)। এই প্রথম মানুষ জানলো শুধু হিসাব করলেই চলবে না- উক্ত হিসাবকৃত যাবতীয় কার্যক্রমের তথ্যাবলী সংরক্ষণেরও প্রয়োজন আছে। স্যার চার্লস ব্যাবেজই সর্বপ্রথম তাঁর এ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিনে ব্যবহৃত এক ধরনের পাঞ্চ কার্ডে এইসব তথ্যাবলী সংস্করণের উপায় আবিষ্কার করেন। অবশ্য সেই সময় একটি পাঞ্চ কার্ড মাত্র একবারই ব্যবহার করা যেত।
পরবর্তীতে স্যার চার্লস ব্যাবেজের এই পাঞ্চ কার্ডে নতুন মাত্রা যোগ করেন তাঁরই এক ছাত্রী লেডি লাভলেস (Lady Lovelace)। তিনি উক্ত পাঞ্চ কার্ডটিকে বার বার ব্যবহার করার নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করেন। এই যন্ত্রটি তখন উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তিবিদদের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য যন্ত্র হিসেবে সমাদৃত হয়ে উঠে।
কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ধারণার অন্যতম প্রবর্তক হলেন এই লেডি লাভলেস। পুরো নাম অগাস্টা অ্যাডা লাভলেসে। তিনি ছিলেন বিশেষ গাণিতিক প্রতিভাধর মহিলা। চলো, এই সুযোগে লেডি লাভলেসের জীবনবৃত্তান্ত জেনে নিই।
অগাস্টা অ্যাডা লাভলেস- জন্ম : ডিসেম্বর ১০, ১৮১৫ এবং মৃত্যু :নভেম্বর ২৭, ১৮৫২। তাঁকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ধারণার প্রথম প্রবর্তক মনে করা হয়। তিনি চার্লস ব্যাবেজের অ্যানালাইটিক ইঞ্জিনের একটি বর্ণনা লেখেন।
তাঁকে ডাকা হতো কাউন্টেস অফ লাভলেস বা শুধুই অ্যাডা লাভলেস নামে। তাঁর জন্ম লন্ডনের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। কবি লর্ড বায়রন ছিলেন তাঁর পিতা। অ্যাডা মাত্র ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন। ১৮৫২ সালের ২৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়- জরায়ুর ক্যান্সার এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে।
স্যার চার্লস উইলিয়াম ব্যাবেজ যখন তাঁর ডিফারেন্স মেশিন বা এ্যানালাইটইক্যাল ইঞ্জিন নামক কম্পিউটার আবিষ্কারের নেশায় মত্ত- তখন অ্যাডা তার গণিতবিষয়ক বিশেষ ক্ষমতার দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন এই কম্পিউটারগুলোর নাম্বার ক্রাঞ্চিং-এর অমিত সম্ভাবনা সম্পর্কে। চার্লস ব্যাবেজ তাই লিখে গেছেন তাঁর Decline of Science in England এই বইয়ে। আর এমন একটা সময়ে এই অসামান্য নারী চার্স ব্যাবেজকে যেসব সম্ভাবনার কথা জানান- তখন সেটা কাজকে আরও বেগবান করেছিল। অ্যাডা অগাস্টাকে তাই বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবেও ধরা হয়।
বায়রানের সৎ-বোন অগস্টা লেই- এর নামে মেয়ের নাম রাখা হয়, আর বায়রন তাকে অ্যাডা নাম দেন। মাত্র একমাস যখন অ্যাডার বয়স তখন থেকে তার মা অ্যানাবেলা তাকে নিয়ে আলদা হয়ে যান।
ছোট থেকেই অ্যাডা কিছুটা অসুস্থতায় ভূগছিলেন।
প্রচণ্ড মাথাব্যাথা হতো এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা হতো। ১৮২৪ সালে তাঁর বাবা মারা যান। ১৮২৯ থেকে তিনি হাম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ততায় ভূগছিলেন। কিন্তু ক্রাচে ভর দিয়ে হলেও শিক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৮৩২ এ যখন তাঁর বয়স ১৭ তখন তাঁর বিশেষ গাণিতিক প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তাঁর ছেলেবেলা থেকেই মা তাঁকে গণিতে দক্ষ করে তুলতে চাইতেন- বাবার প্রভাব যাতে কোনভাবেই মেয়ের মধ্যে প্রতিফলিত না হয় এই ভেবে। ১৮৪১ সাল পর্যন্ত অ্যাডা জানতেনই না যে লর্ড বায়রন তাঁর বাবা। বাসায় গৃহশিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতেন তাঁকে। গণিতজ্ঞ ও যুক্তিবিদ ডি-মরগ্যান তাঁর শিক্ষক ছিলেন। স্যার চার্লস ডিকেন্স, স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে’র সাথেও তাঁর জানাশোনা ছিল। ১৮৩৩ সালের ৫ জুন তাঁর সাথে পরিচয় হয় বিশ্ববিখ্যাত স্যার চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে।
চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে তাঁর বেশ ঘনিষ্ঠ এবং রোম্যান্টিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। ব্যাবেজ শুরু থেকেই অ্যাডার অসাধারণ ধীশক্তি, সাবলিল লেখনী এবং প্রতিভায় মুগ্ধ ছিলেন। কারণ, অ্যাডার অসাধারণ প্রতিভার পাশাপাশি তিনি ছিলেন দারুণ সুন্দরীও।
Related: দ্যা ফিলোসফি অফ ব্যারোমিটার
চার্লস ব্যাবেজ, যিনি তাঁর সময়ের লোকদের কাছে অনেকটা পাগল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, তাঁর নতুন ধ্যান ধারণাকে মাত্র গুটিকয়েক মানুষ বুঝতে পেরেছিলেন- তন্মধ্যে অ্যাডা অগ্রগণ্য। তাঁকে মর্যাদা দিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রণিত প্রোগ্রামিং ভাষার নামও রাখা হয় অ্যাডা।
কনসিভিং অ্যাডা নামে তাঁকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট অথেনটিসিটি হলোগ্রামে তাঁর ছবিও আছে।
কম্পিউটিং এবং প্রোগ্রামিং-এ বিশেষ অবদানের কারণে ২৪ মার্চকে অ্যাডা লাভলেস দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়ে থাকে।
যাহোক, অ্যাডা লাভলেস এবং স্যার চার্লস ব্যাবেজের সমন্বয়ে সময়ের সাথে সাথে উন্নত চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটতে থাকে। স্যার চার্লস ব্যাবেজের ধারণাকে ভিত্তি করে ১৮৮০ সালে ড. হারম্যান হলোরিথ (Dr. Herman Hollerith) নামের একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ট্যাবুলেটর মেশিন (Tabulator Machine) নামে উন্নতমানের গণনাযন্ত্র তৈরি করেন। তাঁর তৈরি ট্যাবুলেটর মেশিন দিয়ে আমেরিকান সেনসাস ব্যুরো অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লোকগণনার কাজ করে।
সেই প্রথম মানুষের তৈরি কম্পিউটার যন্ত্র ব্যবহার করে একটি বিশাল কাজ করার প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে। যন্ত্রটির প্রসারতা এবং চাহিদার দিক বিবেচনা করে ড. হারম্যান আরও উন্নত যন্ত্র আবিষ্কারেরচেষ্টায় অন্য একটি কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়ে নতুন কম্পানী গঠন করেন।
এই কোম্পানীর নাম দেয়া হয় টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানী (Tabulating Machine Company)। সেই সাথে যেন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আজকের বিশ্বখ্যাত সর্ব্বৃহত কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইবিএম (IBM-International Business Machine) নামক প্রতিষ্ঠানের। কারণ, সেই সময়ের উক্ত টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানী পরবর্তীতে IBM নামে পরিবর্তিত হয়।
এরপর মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কারের অদম্য আগ্রহের কারণে ১৯৪০ সালের গোড়া থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তৈরি হয় একের পর এক উন্নত প্রযুক্তির কম্পিউটার। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল কম্পিউটারকে আমাদের সামনের টেবিলে আনা হয়েছে তার বেশ কিছু পরে।
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।