সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ করোনা নামক ভাইরাসে আক্রান্ত। এই পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই লক্ষ। আমাদের বাংলাদেশেও মৃতের সংখ্যা একশ এর কোটা ছাড়িয়েছে। চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ। এ যেন লাশের মিছিল। আজ যারা দেশের মাথা, দেশের কর্ণধর, তারা কর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন, ভেবে পাচ্ছেন না কি করবেন। এই দুঃসময়ে আসুন আমরা দেখি, ইসলামিক দৃষ্টিতে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরামর্শ এবং এমন সময় আসলে আমাদেরকে প্রিয় নবী (সাঃ) কি করতে বলেছেন।
রাসূলে কারীম (সাঃ) যেভাবে আমাদেরকে আখেরেতের পথ এবং সফলতার কথা বলেছেন, ঠিক তেমনই ভাবে বিভিন্ন রকম আপদ-বিপদ ও রোগ-বালাই হতে সুরক্ষার উপায়ও বাতলিয়েছেন। যেমনই ভাবে তিনি আমাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দোয়া-জিকির এর কথা তেমনই ভাবে তিনি অনেক চিকিৎসার কথাও বলেছেন।
Related: দাজ্জাল কে? ইলুমিনাতি ও দাজ্জাল সম্পর্কে জানুন।
আজকের করোনা জীবাণু যেমন বিশ্ব ব্যাপী মানুষের মন ও শরীরে দাপটের সাথে আধিপত্ত বিস্তার করে আছে, যখন পৃথিবীর সকল চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা এর প্রতিশোধক আবিষ্কারে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন আমাদের বুঝা উচিত বা সুদৃঢ় ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত বা রাখি রাসূল (সাঃ)-এর শিখানো চিকিৎসা পদ্ধতির উপর। কেননা আল্লাহ্ তায়ালা রাসূল (সাঃ) প্রসঙ্গে বলেছেনঃ তিনি নিজে থেকে কিছু বলেন না, তিনি যাহা বলেন তা আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে ওহীর ভিত্তিতে বলে থাকেন। যার কারণে তিনি যত চিকিৎসার কথা বলছেন, সেগুলো ওহী এবং সেটা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ হোক।
Related: মুসা (আঃ) কর্তৃক খিযির (আঃ) হইতে এলেম আহরণ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।
আমাদের এ জীবনে যেকোন অসুখ-বিসুখ থেকে বাঁচার আপাতদৃষ্টিতে সকল উপায় যদি বন্ধ হয়েও যায়, তবুও একজন মুমিন হিসেবে নবী কারীম (সাঃ)-এর বাতানো সে সকল সর্বোরোগের চিকিৎসা গুলো আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় এবং শেষ অবলম্বন হিসেবে ঠিকই থেকে যায়। আজ আমরা তারই কিছু চিকিৎসা সম্পর্কে জানবঃ যে গুলোর মধ্যে মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু তায়ালা সকল রোগ-বালাই থেকে নিরাপদ থাকার উপায় বলে দিয়েছেন।
ইসলামিক দৃষ্টিতে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরামর্শ
কালোজিরা
এ প্রসঙ্গে সহিহ বুখারী শরীফে এসেছে, নবী কারীম (সাঃ) বলেনঃ কালোজিরার ভিতরে আল্লাহ্ সুবাহানাহু তায়ালা মৃত্যু ব্যতিত পৃথিবীর সকল রোগের শিফা নিহিত রেখেছন। অর্থাৎ কালোজিরা যদি কেউ গ্রহণ করেন বা খান, সেটা সরাসরি খাওয়া হতেপারে, তেল করে খাওয়া হতে পারে বা ভর্তা করে খাওয়া হতে পারে। যে ভাবেই হোক না কেন কেউ যদি কালোজিরা গ্রহণ করেন এর মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবাহানাহু তায়ালা তাকে সকল রোগ থেকে আরোগ্য লাভের তৌফিক নসীব করবেন ইনসাআল্লাহ্।
Related: ভূনা করা মাছ কিভাবে লাফিয়ে পড়ল জানতে ক্লিক করুন।
মধু
দ্বিতীয়ত যে চিকিৎসার কথা হযরত রাসূলে আকদাস (সাঃ) বলছেন, তা হচ্ছে প্রকৃতিক মধু। মধু সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা নিজেই পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সুরাতুন নাহলের ৬৯ নং আয়াতে বলেছেনঃ এর মধ্যে মানুষের জন্য শিফা রয়েছে, আরোগ্য লাভের উপাদান রয়েছে। এছাড়া নবী কারীম (সাঃ) নিজেও মধু পছন্দ করতেন। বুখারী মুসলিমে রয়েছে, তিনি বলেনঃ দুটি শিফা বা আরোগ্য লাভের উপায় তোমরা অবলম্বন করবে। তার একটি হলো মধু পান করা, দ্বিতীয়টি হলো কোরআনে পাকের তেলাওয়াত করা। যার কারণে পবিত্র কোরআনে পাক তেলাওয়াত করে মানুষের শরীরে যার ফুক করলে যেমন চিকিৎসার কাজ দেয়, তেমনি মধু পান করলেও। এটাও মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইতে চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। মধু যাহা আমরা সর্বোরোগের মহাঔষধ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি ।
হেজমা
তৃতীয় হলো হেজমা বা আমরা যেটাকে শিংগা লাগানো বলতে পারি। এই হেজমা বা শিংগা লাগানো এটাও সর্বোরোগের মহাঔষধ যাহা রাসূলে কারীম (সাঃ) নিজেই গ্রহণ করতেন। এছাড়া কম্ বেশী একটি হাদিছে এমন আছে, তিনি বলেনঃ যদি কেউ বিশেষ কিছু সময়ে হেজমা গ্রহণ করে, তাহলে তার সকল রোগ থেকে আল্লাহ্ তায়ালা আরোগ্য লাভের তৌফিক দান করবেন এবং সকল রোগের ঔষধ হিসেবে এটি তার জন্য কাজ করবে।
বর্তমানে এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন কিছু স্টীকার পাওয়া যায়, যেগুলো বিভিন্ন রকমের মেডিসিনে ঠাঁসা থাকে এবং সেগুলো পায়ের তালুতে লাগালে ঠিক শিংগার মতই শ্রীরের বিষাক্ত পদার্থ টেনে বের করে নিয়ে আসে। সুতারাং সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে । সেটা সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত হবে।
Related: প্রিয় নবী (সঃ) Prophet – আল্লাহ্ই সর্বোত্তম রক্ষক
জম জমের পানি পান করা
জম জমের পানি প্রসঙ্গে সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেনঃ জম জমের পানি রোগের জন্য ঔষধ। এখানে সাধারণ ভাবে তিনি বলেছেন। সুতারাং সকল রোগের ঔষধ জম জমের পানি। এছাড়া অনেক বর্ণনায় এসেছে, যদি কোন রোগের উদ্দেশ্যে জম জমের পানি পান করা হয়, তাহলে আল্লাহ্ তায়ালা সে উদ্দেশ্য পূরণ করেন অর্থাৎ আরোগ্য নসীব করেন। এ হাদিসটি মোটা মুটি গ্রহণ যোগ্য পর্যায়ের। তাহলে জম জমের পানি এটিও সর্বোরোগের ঔষধ এবং মহা চিকিৎসা। এছাড়া মহা নবী (সাঃ)-এর চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল জম জমের পানি। তাছাড়া এমন অনেক লোকের দুরারোগ্য ব্যাধি ছিল যাহা সারা পৃথিবীর সকল চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যর্থ হয়ে যখন জম জমের পানি নিয়ম মত পান করতে থাকল তখন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাদেরকে আরোগ্য নসীব করলেন। অতএব, জম জমের পানি, এটিও একপ্রকার অব্যর্থ মহাঔষধ।।
আজওয়া খেজুর
আজওয়া এক প্রকার খেজুর বিশেষ। এই বিশেষ খেজুরের দাম সাধারণত একটু বেশী। এই খেজুরের সম্পর্কে সহিহ বুখারীতে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলছেনঃ কেউ যদি প্রতিদিন সকালে সাতটি করে আজওয়া খেজুর খায়, ঐ দিনে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন রোগ তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। সুতারাং আজওয়া খেজুর এর মধ্যেও সর্বোরোগের চিকিৎসা রয়েছে।
Related: ইলুমিনাতি চিহ্ন, ইলুমিনাতি কি, ইলুমিনাতি কারা ? ইলুমিনাতি ও ইসলাম এর মাঝে কি সম্পর্ক ?
এ ছাড়াও করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরামর্শ এর মাঝে যে সমস্ত আমলের কথা বলা হয়েছে, যেমনঃ- সব সময় পাকছাপ ও অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও আমল পার্থনা গুলি সময় মত আদায় করা, মাসনুন দোয়া ও বিশেষ দোয়া গুলো বেশী পড়া এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ম কানুন গুলি মেনে চলা। যেমন, সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অযথা ঘরের বাইরে ঘুরা ঘুরি না করা গুজবে কান না দিয়ে আল্লাহ্র প্রতি ভরসা রাখা ও ধৈর্য্য ধারন করা। তাহলেই আমরা এই মহামারি থেকে নিরাপদ থাকতে পারব ইনসাআল্লাহ্!!!!