ট্রানজিস্টর বহুল ব্যবহৃত একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস। এটি তিন টার্মিনাল তিন লেয়ার এবং দুই জাংশন বিশিষ্ট সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস যা ইনফুট সিগনালের শক্তি বৃদ্ধি করে বিভিন্ন কাজ সমধান করে থাকে। আবার সার্কিটে সুইচের ভূমিকা নিতে পারে।
ট্রানজিস্টর কাকে বলে ?
একটি পাতলা P- টাইপ বা N- টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের উভয় পার্শে একটি করে বিপরিত টাইপের ( N বা P ) সেমিকন্ডাক্টর সংযোগ করলে যে ডিভাইসের সৃষ্টি হয় তাকে ট্রানজিস্টর বলে। অন্যভাবে বলা যায়, এটি একটি তিন টার্মিনাল, তিন লেয়ার, দুই জাংশন বিশিষ্ট সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস যা ইনপুট সিগনালের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্নি লেকট্রনিক সুইচিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ সমাধান করে।
ইংরেজী ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী উইঙ্কলার একটি নতুন মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করেন। নিজ মাতৃভূমির নামানুসারে পদার্থটির নামকরণ করেন জার্মেনিয়াম।
নতুন পদার্থ জার্মেনিয়ামকে নিয়ে অতঃপর শুরু হয় গবেষণা। তড়িৎ পরিবাহিতার ক্ষেত্রে একে চিহ্নিত করা হয়েছিল অর্ধপরিবাহীরূপে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে বেতার গ্রাহক যন্ত্রে রেডিও ভাল্বের পরিবর্তে জার্মেনিয়ামকে ব্যবহার করার জন্য বিজ্ঞানীরা সচেষ্ট হয়ে উঠলেন।
Related: ব্যারোমিটার সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিক করুন।
এর একটা কারণ অবশ্য ছিল। বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই গবেষণা করেছিলেন, অর্ধপরিবাহী জার্মেনিয়ামকে রেডিও ভাল্বরূপে ব্যবহার করা চলবে। জগদীশচন্দ্র বসু, মার্কোনি প্রভৃতি বিজ্ঞানী চেষ্টাও করেছিলেন ওকে কাজে লাগাতে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার চলতে থাকায় খরচ কমানোর জন্য অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠলেন এবং গবেষণা শুরু হলো নানা জায়গায়। অবশেষে ভাল্বের পরিপূরক হিসেবে জার্মেনিয়ামকে প্রথম ব্যবহার করে সাফল্য অর্জন করলেন ডঃ জন বার্ডিন এবং জন ওয়াল্টার ব্রাটাইন নামে দুজন মার্কিন বিজ্ঞানী। এভাবেই আধুনিক কালের ট্রানজিস্টারের সূত্রপাত ঘটলো। অবশেষে ১৯৫১ সালে বহু বিজ্ঞানীর বহু গবেষণালদ্ধ ফল থেকে সত্যসত্যই আবিষ্কার হলো প্রকৃত ট্রানজিস্টার। আর রেডিও ভাল্বের দরকার হলো না, সে কাজ ছোট্ট ও হালকা একটুকরা ট্রানজিস্টার সম্পুর্ন করলো।
বর্তমান ট্রানজিস্টারের অভাবনীয়ভাবে উন্নতি হয়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নানা জাতীয় ট্রানজিস্টার। অনেক আবার সিলিকঙ্কে ঐ কাজে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু জার্মেনিয়ামের একটা বড় গুণ হচ্ছে, ওর মত এত বিশুদ্ধ পদার্থ খুব কমই সলিড স্টট ট্রানজিস্টারে পাওয়া যায়। এত বিশুদ্ধ যে, হাজার কোটি জার্মেনিয়াম পরমাণুর সঙ্গে মাত্র একটি অন্য পদার্থের পরমাণু মিশে থাকে কিনা সন্দেহ। তাই জার্মেনিয়াম হচ্ছে ট্রানজিস্টার তৈরির কাজে আদর্শ মৌল।
ট্রানজিস্টর কনফিগারেশন
ট্রানজিস্টারের সঠিকভাবে শ্রেণিবিভাগ করা বেশ কঠিন কারণ আধুনিক গবেষণায় বর্তমানে নতুন নতুন শ্রেণির ট্রানজিস্টার উদ্ভাবিত হচ্ছে। এখানে ট্রানজিস্টারের আপাত শ্রেণিবিভাগ দেখানো হলো।
প্রাথমিক ভাবে ট্রানজিস্টারকে দুই ভাবে ভাগ করা যায়।
১। পয়েন্ট কন্টাক্ট ট্রানজিস্টার
২। জাংশন ট্রানজিস্টার।
সেমিকন্ডাক্টরের উপর ভিত্তি করে ট্রানজিস্টর
১। সিলিকন Transistor
২। জার্মেনিয়াম Transistor
৩। পলিক্রিস্টালিন Transistor
৪। মনোক্রিস্টালিন Transistor
৫। সিলিকন কার্বাইড Transistor
গঠনের উপর ভিত্তি করে জাংশন ট্রানজিস্টার দুই প্রকার
১। ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টার
২। বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টার
বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টারের গঠন প্রকৃতি গোলারিটি অনুসারে দুই প্রকার।
১। জাংশন ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টার ( FET)
২। মেটাল অক্সাইড সেমিকন্ডাক্টর ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টার ( MOSFET)
ট্রানজিস্টারের টার্মিনাল বর্ণনা সমূহে
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি ট্রানজিস্টারের তিনটি টার্মিনাল থাকে।
(১) বেস
(২) ইমিটার
(৩) কালেক্টর
বেস
বেস স্তর ইমিটার ও কালেক্টরের সাথে দুটি পি এন জাংশন তৈরি করে থাকে যথা-
(১) বেস-ইমিটার
(২)বেস-কালেক্টর
বেস-ইমিটার জাংশন ফরোয়ার্ড বায়াস প্রদান করে যেটি ইমিটার সার্কিটে লো-রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে থাকে। বেস-কালেক্টর জাংশন রিভার্স বায়াস প্রদান করে থাকে যা কালেক্টর সার্কিটে হাই রেজিস্ট্যান্স প্রদান করে থাকে।
ইমিটার
ইমিটারকে সবসময় বেসের তুলনায় ফরোয়ার্ড বায়াস দেওয়া হয়।
পিএনপি ও এনপিএন ট্রানজিস্তারের ক্ষেত্রে বেস-ইমিটার সর্বদা ফরোয়ার্ড বায়াস দেওয়া হয়। ট্রানজিস্টর এ ইমিটার লেয়ারে উচ্চ মানের ডোপিং করা হয়ে থাকে কারণ ইমিটার অংশ সর্বাপেক্ষা অধিক কারেন্ট সরবরাহ করে থাকে।
কালেক্টর
কালেক্টর ইমিটারের বিপরীত দিকে অবস্থান করে থাকে। এতে সবসময় রিভার্স বায়াস প্রদান করা হয়। এটা বেস-কালেক্টর জংশন হতে মেজরিটি চার্জ কেরিয়ার সংগ্রহ করে সার্কিটে কারেন্ট প্রবাহ যে কারণে এই স্তরকে কালেক্টর বলা হয়। কালেক্টর অংশ বেস ও ইমিটারের অধিক প্রসস্ত করা হয় এবং ইমিতারের তুলনায় হালকা ডোপিং করা হয় কারণ এই স্তরে অধিক পাওয়ার অপচয় হয়ে থাকে।
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।