বাংলাদেশের প্রায় ৯ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যাবহার করে। তার মাঝে প্রায় অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যাবহার হয় অফিস বা বাসার কম্পিউটার, মোবাইল সহ অন্যান্য ডিভাইসে। মুলত কম্পিউটার বলতে অধিকাংশ ব্যাবহারকারী উইন্ডোজ আর সীমিত পরিমানে ম্যাক ব্যবহার করে থাকেন। ব্যক্তিগত বা অফিস যে কাজের জন্য ব্যবহার করি না কেন আমাদের মাথায় এতা কম থাকে যে যদি আমার সকল তথ্য অন্যের কাছে চলে যায় বা সিস্টেমটি ক্রাস করে তাহলে কি হবে ? আর সহজ লভ্যতার কারনে আমাদের সকলেই পাইরেটেড উইন্ডোজ ভার্শন ব্যবহার করি (কিছু অফিস আদালত ব্যাতিত)। আজ আমরা পাইরেটেড উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানব। তবে ৮ নং পয়েন্ট টা আমরা সকলেই ফেইস করি।
পাইরেটেড উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা অসুবিধা
সর্বদা আসল অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যান্টি-ভাইরাস প্রোগ্রাম রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি যদি উইন্ডোজের সামর্থ না রাখেন তবে লিনাক্সের স্বাদ বেছে নিতে পারেন। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন বা অনলাইনে আয় করার কাজের সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে রিয়েল আইপি এর সাথে সাথে একটি জেনুইন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম থাকা আবশ্যক । তাই উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানা আবশ্যক।
পাইরেটেড উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা
পাইরেটেড উইন্ডোজের একটাই সুবিধা তা হল একদম ব্যবহার না করার চেয়ে কিছু তো ব্যবহার করা যাচ্ছে (ভাইরাস যুক্ত)। এ বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে যে একজন হ্যাকার আপনাকে এত বড় একটা সুবিধা করে দিচ্ছে তা নিশ্চই এমনি এমনি নয়। তার পেছনে অবশ্যই উদ্দেশ্য আছে। হয়ত সেই উদ্দেশ্য টা ভাল নাও হতে পারে। পাইরেটেড উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা অসুবিধা দুটার মাঝে সুবিধার পাল্লাটা হাল্কা বলা চলে।
পাইরেটেড উইন্ডোজ ১০ সমস্যা
পাইরেটেড উইন্ডোজের একটি অ্যাক্টিভেশন সরঞ্জাম প্রয়োজন হয় যাতে উইন্ডোজ আপডেটগুলি ডাউনলোড এবং ইনস্টল করতে পারে। এই অ্যাক্টিভেশন সরঞ্জামটি ট্রোজান বা ম্যালওয়ার প্রোগ্রাম বহন করে। আপনি যদি উইন্ডোজ সক্রিয় না করেন, তবে গুরুতর সুরক্ষা প্যাচগুলি প্রয়োগ করা হয় না। পাইরেটেড উইন্ডোজ ransomware ম্যালওয়ার প্রোগ্রামগুলির দরজা খুলে দেয়। সাম্প্রতিক WannaCry ransomware প্রোগ্রামগুলি দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল কারণ সেই সিস্টেমগুলি পুরানো বা আপডেট হয়নি।
Related: অপারেটিং সিস্টেমে কি ? অপারেটিং সিস্টেমে কত প্রকার ?
উইন্ডোজের একটি “ক্র্যাকড” ভার্শন অর্থ সফ্টওয়্যারটি পরিবর্তন করা হয়েছে সুতরাং এটি মাইক্রোসফ্টে পণ্য অ্যাক্টিভেশন সিস্টেমে না গিয়ে কম্পিউটারে কাজ করবে।
এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফটওয়্যার পাইরেসির ফর্ম হিসাবে করা হয়। কোনও ব্যক্তির বা ব্যক্তিদের কাছে একটি বৈধ লাইসেন্স কী নেই, তাই তারা উইন্ডোজের একটি অনুলিপি ব্যবহার করেন যা তৃতীয় পক্ষের দ্বারা সাধারণত “হ্যাকার” দ্বারা “ক্র্যাক” করা হয়েছে। হ্যাকার উইন্ডোজকে এমনভাবে পরিবর্তন করার একটি উপায় নির্ধারণ করে যাতে সফ্টওয়্যারটি এমনভাবে প্রদর্শিত হয় যেন এটি পণ্য সক্রিয়করণের মাধ্যমে হয়েছে, যা এটি পুরোপুরি কার্যকর করে তোলে।
যদি হ্যাকার সক্রিয়ভাবে অ্যাক্টিভেশন সিস্টেমটিকে নিজের দখলে নেয় এবং বাকী সিস্টেমটি একা ফেলে দেয় তবে কোনও কার্যকরী পার্থক্য হবে না, মাইক্রোসফ্টের সার্ভার যদিও সনাক্ত করে যে আপনি সফ্টওয়্যারটির একটি হ্যাক অনুলিপি চালাচ্ছেন তবে উইন্ডোজ আপডেটের সাথে সংযোগ স্থাপনের ফলে সিস্টেমটি অনেক রকম কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে মাইক্রোসফ্টের সার্ভার পাইরেটেড উইন্ডোজকে বন্ধ করার জন্য একযোগে প্রচেষ্টা চালায়, এই মুহুর্তে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য অক্ষম করা হয় এবং এটি আপনাকে বুঝতে পারে যে আপনি “জেনুইন উইন্ডোজ” ব্যবহার করছেন না।
তবে, যদি আপনি এমন একটি অনুলিপি পান যেখানে হ্যাকার অ্যাক্টিভেশনকে পরাজিত করেছে এবং কিছু ম্যালওয়্যার বা তার নিজের যুক্ত করেছে, তবে পাইরেটেড উইন্ডোজ চালানো ব্যবহারকারীর জন্য সুরক্ষা ঝুঁকি। কিছু হ্যাকার যারা পাইরেটেড উইন্ডোজকে পুনরায় বিতরণ করেছেন তারা কেবল আপনি ও আপনার সিস্টেমকে আঁকড়ে রাখতে চান তবে কিছু তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্যতে ঘৃণিত।
জেনুইন উইন্ডোজ ১০ এর ব্যবহার কেন দরকার ?
১। আপনার সিস্টেমের সুরক্ষার জন্য জেনুইন অপারেটিং সিস্টেমটি আপনাকে ভাইরাস সফ্টওয়্যার থেকে সুরক্ষার সুবিধা দেয় যা আপনার সিস্টেমকে ক্ষতি করতে পারে। পাইরেটেড সংস্করণ সর্বদা নির্দিষ্ট ত্রুটিগুলির সাথে আসে যা তাদের আক্রমণে প্রবণ করে তোলে।
২। অপ্রয়োজনীয় অ্যাক্সেস প্রতিরোধ পাইরেটেড সংস্করণ ব্যবহার করা আপনার সিস্টেম থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ফাঁস হওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। আপনি যদি সত্যিকারের অপারেটিং সিস্টেমগুলি ব্যবহার না করেন তবে আপনি অবশ্যই হ্যাকারদের সাথে আপস করছেন। ভাইরাস আক্রমণ এবং ম্যালওয়ারের সম্ভাবনা অনেক বেশি। যদি অপারেটিং সিস্টেমটি পাইরেটেড সংস্করণ হয় তবে হ্যাকাররা আপনার তথ্য সহজেই অ্যাক্সেস করতে পারে। হ্যাকার আপনার উইন্ডোজের পাইরেটেড সংস্করণটি ব্যবহার করা থাকলে আপনার ব্যাঙ্ক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিতে সহজেই অ্যাক্সেস করতে পারে।
Related: মোবাইল ফোন কি এবং কিভাবে কাজ করে।
৩। পাইরেটেড সংস্করণ আপনার সিস্টেমকে ধীর করে দেয় আপনি যদি আসল অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারটি ব্যবহার না করে থাকেন তবে আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিছু সময়ের পরে ধীর হতে পারে। এটি অচল হয়ে যেতে পারে এবং কার্যগুলির গতি প্রক্রিয়াটিতে সত্যই কমতে পারে। এভাবে আপনার সময় এবং শক্তি নষ্ট হবে।
৪। জেনুইন অপারেটিং সিস্টেমের জন্য খুব কম ফর্ম্যাটিং দরকার আপনি যদি পাইরেটেড সংস্করণ ব্যবহার করে থাকেন তবে বেশ কয়েকটি সমস্যার কারণে আপনি প্রতি ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে আপনার কম্পিউটারের ফর্ম্যাট করার সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ফরম্যাট করার সময় কিছু সত্যই গুরুত্বপূর্ণ ডেটা হারাতে পারে। এট খুব কষ্টের যখন আপনাকে ঊইন্ডোজ ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হয়।
৫। উইন্ডোজের পাইরেটেড সংস্করণটি সব সময় নির্দিষ্ট সময় ধরে কাজ করা যায়। যেমন – ১২৮ দিন বা ৩৬৫ দিন। জেনুইন অপারেটিং সিস্টেমের কোন সময় সীমা নেই, সেটি আজীবন মেয়াদ।
Related: প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সেকাল একাল
৬। আপনাকে কিছু সময়ের জন্য উইন্ডোজ ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে হ্যাকাররা ম্যালওয়্যার ভাইরাস আপনার সিস্টেমে দেয়ার মাধ্যমে তাদের বড় ধরেনের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিচ্ছে। DOS বা DDOS আক্রমনের মত কাজে আপনার অজান্তে আপনাকে ব্যবহার করে যাবে যা আপনি বুঝতেও পারবেন না।
৭। জেনুইন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য উইন্ডোজ ডিফেন্ডার একটি ভাল মানের এন্টিভাইরাস যা পাইরেটেড উইন্ডোজে আপডেট না পেলে ভাল মত কাজ করে না।
Related: ব্যারোমিটার সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিক করুন।
৮। পাইরেটেড ভার্শন সব সময় আপনার সিস্টেমে স্পাইওয়ার বা ম্যালওয়্যার ভাইরাস দ্বারা আপনার তথ্য নেয়ার জন্য ক্রল করে যা আপনার সিস্টেমকে ধীর গতি করে দেয়ার সাথে সাথে হ্যাং করে দেয়।
৯। নীল স্কীন (Blue Screen) এর কথা কম বেশি সকল উইন্ডোজ ব্যবহারকারী জানে, তবে জেনুইন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীরা নয়। কারন নীল স্কীন সমস্যা হয় যখন আসল কোন সিস্টেমকে রি ফরমেট করে তৈরী করা হয়।
১০। জেনুইন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সরাসরি মাইক্রোসফট থেকে আপডেট পেয়ে থাকে এবং সকল প্রকার সিকিউরিটি আপডেট সহ। জেনুইন উইন্ডোজে ডিজিটাল লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে। যা উপরে ছবিতে দেখানো হয়েছে।
তাহলে এটা বলা যায় যে পাইরেটেড উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা অসুবিধা থেকে এটা তো বুঝতে পারছি আমাদের কোনটা ব্যবহার করা উচিত। আমরা অনেকেই মনে করি যে আমার তো তেমন কোন কাজে আসে না কম্পিউটার তাহলে জেনুইন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের কি দরকার। দরকারটা তখন যখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা পারিবারিক ছবি সহ আপনার উইন্ডোজটি ক্রাস করে।