বিমান কিভাবে উড়ে
বিমান কিভাবে উড়ে? এই প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। বিমান (AIRCRAFT) আকাশে ওঠে ‘লিফট’ পদ্ধতির মাধ্যমে। আধুনিক বিমানে পাখা বাদ দিয়ে আরো চারটি প্রধান অংশ থাকে। (১) দেহ বা ফিউজিলেজ, (২) কন্ট্রোল সারফেস, (৩) প্রপেলার, (৪) লেজ বা টেল। লেজের অংশ এবং পাখাই বিমানকে অঠা-নামায় সাহায্য করে, প্রপেলার সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় আর সব রকম ভার বয় দেহ।
আধুনিক (AIRCRAFT) জেট-বিমানে প্রপেলার থাকে না। তাহলে বিমান কিভাবে উড়ে? এটি চলে নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুযায়ী। এর লম্বা নলে হাওয়া ভর্তি করে তা সরু পথে বের করা হয়, হাওয়া তীব্রভাবে বিমানের পিছন দিক থেকে বেরিয়ে গেলে বিমান হাওয়ার চাপে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আধুনিক জেট-বিমান র্যাম জেট, প্রপ জেট, টারবো জেট এই তিন রকম হয়। রকেটও অনেকটা জেট-বিমানের মত, তবে এর ভেতরেই নিজস্ব অক্সিজেন থাকে, জেটের মত বাইরে থেকে হাওয়া জোগার করতে হয় না।
Related: মানুষ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর রেডিও সম্পর্কে মিথ্যাটাই জানে
সাধারণ বিমান বা জেট বিমানকে আকাশে উঠতে গেলে মাটিতে খানিকটা চলতে হয়। এজন্য রানওয়ে এরোড্রোমের দরকার হয়।
কিন্তু হেলিকপ্টার নামক আকাশযানের বেলায় এ সবের দরকার পড়ে না, কারণ হেলিকপ্টার সরাসরি মাটি থেকে ওড়ে। এতে প্রপেলার থাকে না তার বদলে বিমানের মাথায় পাখা লাগানো থাকে। এই পাখাকে রোটার বলে। হেলিকপ্টারের পূর্বপুরুষ ১৯২৩ সালে স্পেনের সিয়েরভার তৈরি অটোজাইরো বিমানটি। এতে প্রপেলারও ছিল, উপরে পাখাও ছিল। জলে, স্থলে, আকশেই শুধুমাত্র মানুষের চলার গতি থেমে থাকেনি, তারা পাতালেও প্রবেশ করেছে। অতি প্রাচীন কালে আমরা পাতালের ধ্যানধারণা পেয়েছি, সেখানে মানুষের যাতায়াতের কথা পড়েছি। বর্তমানেও মানুষ চলাফেরায় সুবিধার জন্য নির্জন পাতালে প্রবেশ করেছে। যার উজ্জ্বল উদাহরণ পাতাল রেল।
লন্ডনে ১৮৩৩ সালে টেমস নদীর তলাকার মাটিতে রেললাইন পেতে সার মার্ক ইন্সাবার্ড যে নিদর্শন তৈরি করেন, তাকে অনুসরণ করেই এরপর প্যারিস, মস্কো, মাদ্রিদ, টোকিও নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া প্রভৃতি ৪৬টি দেশে এমনকি কলকাতাতেও পাতাল রেলপথ এবং পাতাল রেল গড়ে উঠেছে।
Related: Television আবিষ্কার ও তার পেছনের মানুষগুলো ১ম পর্ব
এভাবেই মানুষ তাদের যাতায়াত, মালবহন ও যোগাযোগের উন্নতিকল্পে যানবাহন তৈরির ক্ষেত্রে একের পর এক পদক্ষেপ বাড়িয়েছে। এমন কি তারা উন্নত মহাকাশযান তৈরি করে মহাকাশে পাড়ি দিতেও সক্ষম হয়েছে!!!
হেলিকপ্টার (HELICOPTER) আবিষ্কার
বিমান কিভাবে উড়ে জানার পর এখন জানব হেলিকপ্টার আবিষ্কার কিভাবে হল। উড়োজাহাজ আবিষ্কারের পর মানুষের তৃপ্তি মিটলো না। কারণ, উড়োজাহাজ ওড়ার সময় বেশ কিছুটা জায়গায় আগে তাকে চালাতে হয়। তারপর সেটাকে ওড়াতে হয়। এছাড়া আকাশে একজায়গায় স্থির থাকাও সম্ভব নয় উড়োজাহাজের পক্ষে।
সবচেয়ে বড় কথা যেখানে সেখানে নেমে পড়ার জন্য উড়োজাহাজের প্রয়োজন হয় সুবিশাল জায়গা। সুতরাং মানুষ আরো কম জায়গায় উঠানামা করার জন্য আকাশযান তৈরির পরিকল্পনা করতে শুরু করলো। তখন তৈরি হলো নতুন ধরণের উড়োজাহাজ। এর নাম হেলিকপ্টার। এর গুণ হচ্ছে এটাতে ওঠা-নামার জন্যে খুব কম জায়গা লাগে।
Related: উত্তরঃ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে আমরা যে সব প্রশ্ন করে থাকি
আমরা জানি বিমান কিভাবে উড়ে। সাধারণ বিমান বা জেট বিমানকে আকাশে উঠতে গেলে মাটিতে খানিকটা চলতে হয়। এজন্য রানওয়ে এরোড্রোমের দরকার হয়।
কিন্তু হেলিকপ্টার নামক আকাশযানের বেলায় এ সবের দরকার পড়ে না, কারণ হেলিকপ্টার সরাসরি মাটি থেকে ওড়ে। এতে প্রপেলার থাকে না তার বদলে বিমানের মাথায় পাখা লাগান থাকে। এই পাখাকে রোটার বলে। হেলিকপ্টারের পূর্বপুরুষ ১৯২৩ সালে স্পেনের সিয়েরভার তৈরি অটোজাইরো বিমানটি। এটে প্রপেলারও ছিল, উপরে পাখাও ছিল।
অন্য সব উড়োজাহাজ কিছুটা দৌড়োবার পর আকাশে উড়তে পারে। আর নামবার পরও তাদের মাটিতে খানিকটা ছুটতে হয়। কিন্তু হেলিকপ্টার খাড়াভাবে ওঠে, খাড়াভাবে নামতেও পারে। এর জন্য তার একেবারে মাথায় মস্ত বড় চিৎ করা পাখা থাকে- সেটা মাটির সঙ্গে সমান্তরালভাবে ঘোরে- তাকে বলা হয় রোটার (Rotor) আর, উড়োজাহাজের পাখা থাকে তার আগায়, সেটা ঘোরে উপর থেকে নিচে- একে বলা হয় প্রপেলার (Propellr)। হেলিকপ্টার আরও কয়েকটা কাজ করতে পারে। হেলিকপ্টার আকাশে উঠে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, পাশের দিকে যেতে পারে, এমনকি পিছু হটতে পারে!!!
রকেট (ROCKET) আবিষ্কার
উড়োজাহাজ (AIRCRAFT) আবিষ্কারের পর মানুষ এবার চেষ্টা করতে লাগলো কিভাবে আরো দ্রুত আকাশে ছুটে চলা যায়। রকেট বা বিমান কিভাবে উড়ে তা জানত জন্য শুরু হয়ে গেল রকেট সৃষ্টির জল্পনা-কল্পনা। তবে ঠিক কবে থেকে এই রকেট নিয়ে চেষ্টা হয়েছিল তা নিয়ে মতান্তর আছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, ১২৩২ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোলদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রথম রকেট ব্যবহার করে। তবে তা ছিল কম গতির রকেট। এরপর উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম কনগ্রেভ রকেটের অনেক উন্নতি সাধন করলেন। শোনা যায়, ফ্র্যান্সের নেপোলিয়ান দ্য গ্রেটের বিরুদ্ধে ইংরেজরা রকেট ব্যবহার করেছিল। তবে প্রথম মহাযুদ্ধের পরই রকেট নিয়ে ভালভাবে গবেষণা শুরু হয়। আমেরিকার ড. হাচিংস গডার্ড মাত্র পনেরো বছর বয়সে একটা বড় অ্যালুমিনিয়ামের বেলুন তৈরি করেছিলেন। বেলুনটা অবশ্য বেশিদূর ওড়েনি।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে একটু পরেই মাটিতে নেমে এলো। তবু গডার্ড দমলেন না। মন দিয়ে লেখা পড়া শিখে কলেজে অধ্যাপক হলেন। তিনি তখন ডক্টরেট। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর তৈরি রকেট শূন্যে উঠলো। কিন্তু সেই রকেটের উৎকট শব্দে লোকে ভয় পেয়ে গেল। তখন গডার্ড কিছু সহকর্মী নিয়ে নিউ মেক্সিকোতে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একটা নতুন ধরণের রকেট তৈরি করলেন যার পেটটা বিরাট একটা জালার মতো। তার ভেতরে পুরে দেওয়া হলো প্রচুর জ্বালানি। জ্বালানিতে আগুন দেওয়া হলো। জ্বালানি পুড়ে রকেটের ভেতরে গ্যাসের প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হলো। ঐ চাপই রকেটকে প্রচণ্ড বেগে উপরে ওঠার সাহায্য করলো।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে আবার গডার্ড আকাশে রকেট ওঠালেন। এই রকেটটি লম্বায় ছিল প্রায় পনেরো ফুট আর ওজন প্রায় ৮৫ পাউন্ড। সেটা মাটি থেকে ঘন্টায় প্রায় ৭০ মাইল বেগে ওপরে ওঠে গেল। ড. গডার্ড রকেটকে আরও ওপরে ওঠাবার চেষ্টায় গবেষণা করছিলেন। গ্যাসোলিন আর নাইট্রিক অ্যাসিড, তরল রিফাইনড কেরোসিন ও তরল হাইড্রোজেন, অ্যালকোহল ও তরল অক্সিজেন এই সব নিয়ে গডার্ডের পরীক্ষা শুরু হলো।
Related: এয়ারক্রাফট (AIRCRAFT) এডভ্যাঞ্চার
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ড. গডার্ড পরলোক গমন করায় গবেষণায় ছেদ পরল। পরবর্তীকালে রকেটের (AIRCRAFT) আরও পরিবর্তন ও উন্নতি সাধন করলেন বৈজ্ঞানিকরা। রকেটের গতি নিয়ন্ত্রণের উপায়ও আবিষ্কৃত হলো। মানুষ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করে রকেটে চড়ে চাঁদে গিয়ে নামলো। বিমান কিভাবে উড়ে এ সম্পর্কে জানলাম আমরা।
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।