প্রথম পর্বঃ ঘড়ি ও তার আবিষ্কার ১ম পর্ব
দ্বিতীয় পর্বঃ ঘড়ি ও তার আবিষ্কার ২য় পর্ব
বৈদ্যুতিক বা ব্যাটারী চালিত ঘড়ি
১৮১৪ সালে Sir Francis Ronalds লন্ডনে সর্বপ্রথম ব্যাটারী চালিত ঘড়ির প্যাটার্ন তৈরি করেন। ১৮৪১ সালে আলেকজেন্ডার বেইন এবং জন বারউইচ সর্বপ্রথম ব্যাটারী চালিত দোলক ঘড়ি প্রস্তুত করেন।
ডিজিটাল ঘড়ি (Digital Watch)
ডিজিটাল ব্যাটারী চালিত ঘড়ির আগমনে কাঁটার ঘড়ির অস্তিত্ব নেই। এ ঘড়ির সাহায্যে সরাসরি সংখ্যায় সময় জেনে নেওয়া যায়। এতে প্রতি ৬০ সেকেন্ড পর পর মিনিটের সংখ্যা পরিবর্তন হয়। এবং ৬০ মিনিট পর পর ঘন্টার সংখ্যা পরিবর্তন হয়। ডিজিটাল ঘড়ির সাহায্যে অতি সূক্ষ্ম সময়ও জানা যায়। ঘড়ির বহু পরিবর্তনের পর ১৮৮৩ সালে জোসেফ পালয়েবার সর্বপ্রথম পকেটে বহনযোগ্য ডিজিটাল ঘড়ি তৈরি করেন। এরপর ১৯৭০ সালে LED ডিসপ্লে যুক্ত প্রথম হাতঘড়ির প্রচলন হয়। হ্যামিল্টন ওয়াচ কোম্পানি ‘ পালসার ‘ নামের এই ঘড়ি তৈরি করেছিল। এরপর নানা ঘড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানির আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে প্রতিযোগীতার ফলে নতুন নতুন সব ডিজিটাল হাতঘড়ির আবির্ভাব হয়। আমাদের দেশেও এসব ঘড়ির প্রচলন শুরু হয়। এক্ষেত্রে ক্যাসিও কোম্পানির ডিজিটাল ঘড়িগুলো অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
এটমিক ঘড়ি (Atomic Watch)
এটমিক ঘড়ি হলো সবচেয়ে সঠিক এবং সুক্ষ্মভাবে সময় নির্ণয় করার যন্ত্র। এই ঘড়ির সাহায্যে এক সেকেন্ডের কয়েক লক্ষ ভাগের এক ভাগ মাপা সম্ভব। ১৮৭৯ সালে লর্ড কেলভিন সর্বপ্রথম এটমিক ঘড়ি ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। ১৯৪৯ সালে এটমের কম্পন মাপার যন্ত্র আবিষ্কার হয় আমেরিকায়। তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা ঘড়ি তৈরি করার জন্য বিভিন্ন অ্যাটম নিয়ে কাজ করতে থাকে।
১৯৫৫ সালে সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর কম্পনের সাহায্যে প্রথম ঘড়ি তৈরি করা হয়। এটমিক ঘড়ির ক্ষেত্রে সেকেন্ডের সংজ্ঞা হল ‘ শূন্য কেলভিন তাপমাত্রায় একটি অনুত্তেজিত সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর ৯, ১৯২, ৬৩১,৭৭০ টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড বলে। বর্তমানে হাইড্রোজেন এবং রুবিডিয়াম পরমাণু নিয়েও কাজ করা হচ্ছে আরও সূক্ষ্মভাবে সময় মাপার জন্য।
স্মার্টওয়াচ (Smart Watch)
হাতঘড়ির সর্বাধুনিক রূপ হচ্ছে স্মার্টয়াচ। আগেকার সাধারণ ডিজিটাল হাতঘড়িতে ক্যালেন্ডার, ক্যালকুলেটর প্রভৃতি থাকলেও সর্বপ্রথম স্মার্টওয়াচ চালু হয় ২০১০ সালে। এই স্মার্ট ওয়াচগুলোতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ চালানো যেত। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্টওয়াচে অডিও-ভিডিও পেয়ার, ক্যামেরা, এফ এম রেডিও, ব্লুটুথ, জিপিএস, ইন্টারনেট, অয়াইফাই সব ধরনের প্রযুক্তিই যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক স্মার্ট অয়াচগুলোর সাথে একটি স্মার্টফোন দিয়ে যা যা করা যায় তার প্রায় সবই এখন করা যাচ্ছে স্মার্টওয়াচ দিয়ে। এছাড়া স্মার্টওয়াচ খুব সহজেই স্মার্টফোনের সাথে ব্লুটুথ কিংবা ওয়াইফাই দিয়ে যুক্ত করে স্মার্টফোনের কল কিংবা মেসেজ রিসিভ করা যায়। হাঁটার সময় স্টেপ কাউন্ট, হার্টবিট নির্ণয়, ঘুমের হিসাব রাখা ইত্যাদি কাজও আজকাল করা যাচ্ছে স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে। প্রায় সব স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আজকাল স্মার্টওয়াচ নির্মাণে মনোযোগ দিয়েছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে আরও উন্নতি ঘটবে স্মার্টওয়াচের।
তবে একটা কথা কী ! এত এত আবিষ্কার দিয়েও সময়কে ধরে রাখার কোন ব্যবস্থা কিন্তু মানুষ করতে পারেনি। আর তা কখনো সম্ভবও নয়, কারণ- TIME AND TIDE WAITS FOR NONE.
স্টপওয়াচ বা থামা ঘড়ি (Stop Watch)
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ও পরীক্ষাগারে স্টপওয়াচ ব্যবহার করা হয়। একটি বোতাম টিপে এই ঘড়ি ইচ্ছামত বন্ধ বা চালু করা যায়। খেলাধুলার সময় একজন দৌড়বিদের একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব দৌড়াতেকত সময় লাগে তা পরিমাপের জন্য স্টপওয়াচ ব্যবহার করা হয়। স্টপওয়াচ কাঁটাওয়ালা ও ডিজিটাল দুই ধরণের হতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে দামী ঘড়ি (Expensive Watch)
আমাদের হাতের নাগালে যেসব ঘড়ি আমরা দেখতে পাই– সেগুলোর হয়তো হাজার কিংবা লাখ টাকার মধ্যে দাম। কিন্তু এই বিচিত্র পৃথিবীতে এমন অনেক ঘড়ি আছে যেগুলোর দামের কথা শুনলে আপনাদের মাথা ঘুরে যাবে। নিচের ঘড়িটি বিশ্বের বিলাসবহুল ঘড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম। জ্যাকব অ্যান্ড কোম্পাকরেচনী ঘড়িটি তৈরি করেছে। ২৬০ ক্যারেট অ্যামারেন্ডকাট হীরা দিয়ে এই ঘড়িটির কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কোম্পানি এই ঘড়ির নাম দিয়েছে বিলিওনিয়ার ওয়াচ। ঘড়িটির দাম ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার !!!
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।