প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ Prophet Muhammad (SAW) মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃপুরুষদের জন্মস্থান ছিল এই মক্কা। এখানকার বাসিন্দারা মূর্তিপূজা করত এবং যাপন করত এক জাহেলী জীবন। সেই জীবন ছিল আল্লাহতা’আলার অপছন্দ। কারণ সে জীবনে ছিল পৌত্তলিকতা, মূর্খতা, একগুঁয়েমি ও জুলুম-নির্যাতনে ভরা। এমনি এক মূহূর্তের আল্লাহতা’আলা তাঁর প্রিয় বন্ধু হযরত মূহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসেবে তাদের মাঝে প্রেরণ করেন। তাঁর চল্লিশ বছর বয়সে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ -কে ওহীর মাধ্যমে আদেশ করলেন যাতে তিনি মানুষদেরকে তাওহীদের দিকে, সত্য ধর্মের দিকে, উত্তম চরিত্রের দিকে আহ্বান করেন। প্রিয় নবী (সঃ) এ সমস্ত ভাল কথা বললে মক্কার বাসিন্দারা বিরোধিতা করে এবং শত্রুতায় মেতে ওঠে, এমন কি পুরো এলাকাটা এ সমস্ত আহ্বান ও আকিদা-বিশ্বাস মনোমত হলো না। এ সমস্ত ভাল কথার প্রতি সেখানকার লোকেরা দেখাল প্রচণ্ড দুশমনী ভাব।
Related: ইলুমিনাতি কি ? ইলুমিনাতি কিভাবে জন্ম নিল।
এক সময় আল্লাহতা’আলা তাঁর রাসূলকে মদীনায় হিজরত করার জন্য হুকুম দিলেন। আল্লাহ্র হুকুম পেয়ে তিনি তাঁর একনিষ্ঠ সাথী আবূ বকর (রাঃ)-কে নিয়ে মক্কা থেকে মদীনার দিকে গোপনে বের হয়ে গেলেন। সংবাদ পেয়ে মক্কার মুশরিক পৌত্তলিকরা তাঁদের পিছু নেয়।
এ দিকে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ Prophet Muhammad (SAW) ও আবূ বকর (রাঃ) কিছু দূর গিয়ে মক্কা-মদীনার মাঝপথে অবস্থিত একটি পাহাড়ের ‘সওর’ নামক একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। আর তাঁদের হেফাযতের জন্য আল্লাহতা’আলা সেখানে পাঠিয়ে দিলেন একদল মাকড়সা বাহিনীকে। মাকড়সার দল সেখানে গিয়ে গুহা ও তার পার্শ্ববর্তী বৃক্ষের মাঝে বুনে দিল এক ঘন বিস্তৃত জাল। এ জাল গুহায় আশ্রিত প্রিয় নবী (সঃ) ও আবূ বকর (রাঃ)-এর জন্যে আড়াল হিসেবে কাজ দেয়। অন্যদিকে দুটি বন্য কবুতরকে আল্লাহ্ হুকুম করলেন। ফলে কবুতর দুটো পত পত করে ডানা নেড়ে নেড়ে কোত্থেকে এসে গুহার আশেপাশে উড়তে লাগল এবং তাদের স্বভাব অনুযায়ী বাকবাকু, বাকবাকুম করে এক সময় গুহার মুখের বৃক্ষের সাথে ঝোলানো মাকড়সার জালে অবস্থান নিল। আর কুরআন সত্যি বলেছে, জমিন ও আকাশ জগতের সমস্ত সৈন্যবাহিনী আল্লাহ্র অধীনে।
এদিকে মুশরিকরা তাঁদের খুঁজতে খুঁজতে গুহার মুখে পর্যন্ত পৌঁছে গেল। এত কাছে পৌঁছে গিয়ে ছিল যে, তাদের কেউ নিজের পায়ের দিকে তাকালে হয়ত গুহায় আশ্রিতদের দেখে ফেলত। কিন্তু আল্লাহ্ তাদের সেই সুযোগ দেননি। ফলে তারা সেখানে এসে দিকভ্রান্তের মত সমস্যায় পড়ে গেল, মদীনার যাত্রীরা কোথায় হাওয়া হয়ে গেল? পাশের গুহার মুখে মাকড়সার ঘন জাল দেখে তারা ভাবল, গুহার ভিতরে কেউ ঢুকলে মাকড়সার এখানে থাকার তো কথা নয়! এসব ভেবে ভেবে তারা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে সেখানে আসে। এ দিকে মদীনার যাত্রী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ Prophet Muhammad (SAW) ও আবূ বকর (রাঃ) গুহায় চুপচাপ বসে ছিলেন।
হঠাৎ এক সময় হযরত আবূ বকর (রাঃ) মুশরিকদের পদশব্দ শুনে আতঙ্কিত হয়ে বলে উঠলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! সর্বনাশ! তারা খুব কাছে এসে গেছে, তাদের কেউ পা তুললেই আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তখন আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) তাঁকে অভয় দিলেন এই বলে, তোমার কি ধারণা ঐ দুইজন সম্বন্ধে, যাদের তৃতীয় জন হলেন মহান আল্লাহ্ তা’আলা। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্ বলেছেন, যখন তারা উভয়ে ছিল গুহার ভেতরে। দ্বিতীয় জন তার সাথীকে বলল, চিন্তা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাএদ্র সাথে আছেন। আর এদিকে তাঁদের অনুসরণকারী মুশরিকরা কোন দিশা না পেয়ে অবশেষে হতাশ হয়ে ফিরে গেল। পরে গুহা থেকে বের হয়ে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) নিরাপদে মদীনা পৌঁছে গেলেন। মদীনাকে তিনি বাসস্থান হিসেবে গ্রহণ করলেন। মদীনায় ইসলামের দাওয়াত চারদিকে প্রচারিত হতে লাগলে মানুষ দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীন ইসলামের সুশীতল ছায়ায় শান্তির পরশ খুঁজতে থাকে।ফলে মুসলমানদের দল ভারী হয়ে যায়। কিন্তু মক্কার মুশরিক কুরাইশ দলের শত্রুতা মুহূর্তের জন্যেও থেমে থাকেনি। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছে। মুসলমানরাও বসে থাকেনি। তারা কাফের-মুশরিকদের সাথে যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে। অস্ত্রের মোকাবেলা অস্ত্র দিয়ে ও সৈন্যের মোকাবেলা সৈন্য দিয়ে করেছে।
Related: দাজ্জাল কে ? দাজ্জালের জন্ম কোথায় এবং কিভাবে ?
এমনি কোন যুদ্ধ শেষে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) Prophet Muhammad (SAW) সদলবলে মদীনায় ফিরছিলেন। গ্রীষ্মের দুপুর বেলা। ধূ ধূ মরুভূমি দিয়ে চলছেন সবাই। চারদিকে তপ্ত রোদ। আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) পথিমধ্যে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ের ইচ্ছা করলেন। আর মরু অঞ্চলে বৃক্ষ ছাড়া বিশ্রামের কোন স্থানও নেই। তখনকার আরবের মরু অঞ্চলে এক ধরণের কাঁটা যুক্ত (বাবলা) গাছ ছাড়া বড় কোন বৃক্ষও পাওয়া যেত না।
অগত্যা কোন নিরাপদ স্থান না পেয়ে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) একটি বাবলা গাছের নীচে অবস্থান নিলেন। নিজের তরবারি টাঙ্গিয়ে রাখলেন গাছের এক ডালে। অন্য সাথীরাও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন এবং ছায়াযুক্ত গাছ দেখে শুয়ে পড়লেন। এদিকে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ -এরও এক সময় ঘুমে চোখ লেগে আসে। এরই মধ্যে ঘটে গেল এক অভাবনীয় ঘটনা! সবাই যখন ঘুমে আচ্ছন্ন, এমনি সময় এক কাফের এগিয়ে এল। সে কাছে এসে দেখল, রাসূল (সঃ) ঘুমে আর তাঁর তরবারিটা খাপসহ গাছের ডালে টাঙ্গানো। কাফের কি করল, তরবারিটা আস্তে আস্তে ডাল থেকে খুলে নিল এবং খাপ থেকে ধারালো তরবারি বের করল। ইতোমধ্যে হঠাৎ রাসূল (সঃ)-এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন নাঙ্গা তরবারি হাতে নিয়ে কাফের রাসূল (সঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললঃ আপনি আমাকে ভয় করেন? আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) বললেনঃ না। কাফের আবার বললঃ আমা হতে আপনাকে কে রক্ষা করবে? আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) উত্তর দিলেনঃ আল্লাহ্।
Related: ভুনা করা মাছ যেভাবে থলে থেকে লাফিয়ে সমুদ্র পথে গমন করিল
একথা বলতেই কাফেরের হাত থেকে তরবারিটা নীচে পড়ে গেল। তখন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ Prophet Muhammad (SAW) তরবারিটা হাতে উঠিয়ে নিলেন এবং কাফেরকে বললেনঃ এখন বল আমার হাত থেকে তোমাকে কে রক্ষা করবে? আপনার কাছে আমি সর্বোত্তম ব্যবহার আশা করি। প্রিয় নবী (সঃ) বললেনঃ তুমি সাক্ষ্য দাও, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নাই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল”। কাফের বললঃ না, তবে আমি ওয়াদা করছি, আপনার সাথে কোন দিন যুদ্ধ করব না এবং যারা আপনার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাদের সাথেও আমি থাকব না। তখন হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাকে ছেড়ে দিলেন। পরে সে তার কাফের সাথীদের কাছে এসে বললঃ এখন আমি সর্বোত্তম মানুষের নিকট থেকে এসেছি!!!
* সহীহাইন ও সহী আবী বকর আল ইসমাইলী হতে সংগৃহীত।