কম্পিউটার আবিষ্কারের বিভিন্ন প্রজন্ম
মোটামুটি সত্তর দশকের পর থেকে আধুনিক কম্পিউটারের সূত্রপাত হলেও তখনও পর্যন্ত সেগুলো ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আশির দশকের মাঝামাঝি এসে সাধারণ মানুষের নাগালে আসতে শুরু করে কম্পিউটার। বর্তমান সময়ে আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী ও দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটার আমাদের কাছে অত্যন্ত সুলভে সরবরাহ করতে পারছে পৃথিবীর নামকরা কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠাঙ্গুলো। কম্পিউটার ছাড়া আজ আমরা কিছু ভাবতেই পারি না। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়ন এবং সহজলভ্যতার কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এসে গেছে কম্পিউটার।
বিভিন্ন ক্রমবিবর্তন আর বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে আজ কম্পিউটার আমাদের হাতের নাগালে এসেছে। কম্পিউটারের এই ক্রমবিকাশের ধারাকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি ভাগকে বলা হয় এক একটি প্রজন্ম। এই প্রজন্মের শুরু অবশ্য ৭০ দশক থেকে। অর্থাৎ মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের পর থেকেই। মোটামুটিভাবে বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কের ভিত্তিতে কম্পিউটারের প্রজন্মকে মোট ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
(১) প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত।
(২) দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত।
(৩) তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
(৪) চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার -১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত।
(৫) পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার – বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের কম্পিউটার।
কম্পিউটারের প্রথম প্রজন্ম (১৯৪৬ থেকে ১৯৫৯)
মোতামুটিভাবে দেখা গেছে কম্পিউটারের মূল থিওরী ১৮ শতকে আবিষ্কৃত হলেও এর প্রত্যক্ষ প্রয়োগ ঘটে ১৯ শতকের মাঝামাঝি। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত প্রায় দশ বছরে যেসব কম্পিউটারের আবির্ভাব ঘটে সেগুলোই মূলত প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার। এই প্রজন্মে কয়েকটি কম্পিউটারের আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীতে সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো।
Related: শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার কম্পিউটার – ১ম পর্ব
এনিয়াক ENIAC : প্রথম প্রজন্মের প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার বলতে ENIAC নামক কম্পিউটারকে বোঝায়। ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটিতে জন একার্ট (John Eckert) এবং জন মাউচি (John Mauchy) নামক দুই গবেষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই ENIAC নামক কম্পিউটারটি। সম্পূর্ন নাম Electronic Numerical Integrator And Calculator । পরবর্তীতে নামটি সংক্ষিপ্ত করে ENIAC রাখা হয়।
এই প্রজন্মের কম্পিউটারটি ২০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া ছিল। এর ওজন ছিল ৩০ টন।
Photo: Desktop
এই কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়েছিল ১৮,০০০ ভ্যাকিউম টিউব, ৭০,০০০ রেজিস্টার, ১০,০০০ ক্যাপাসিটর। এতে প্রয়োগকৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ১৫০,০০০ ওয়াট। তৎকালীন আবিষ্কৃত Mark-I কম্পিউটারের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিসম্পন্ন ছিল ENIAC কম্পিউটার। প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ যোগ এবং ৩০০ গুনের কাজ করতে পারত ঐ সময়ে ENIAC কম্পিউটার। এই হিসাবে আমাদের এখনকার অতি সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারের চেয়ে অনেক কম ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল ENIAC নামের এই কম্পিউটারটি। কম্পিউটারের ইতিহাস অনুযায়ী ENIAC-কে বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ও সফল কম্পিউটার হিসাবে গণ্য কর হয়ে থাকে।
এডস্যাক EDSAC : ENIAC- এর উত্তরসূরী হিসাবে গণ্য করা হয় EDSAC নামের কম্পিউটারকে। কেমব্রীজ ইউনিভার্সিটির গাণিতিক গবেষণাগারে এম.ভি. উইলকেস (M.V. Wilkes) নামের জনৈক অধ্যাপক ১৯৪৯ সালে মে মাসে ব্রিটেনে সংরক্ষিত প্রোগ্রামের ধারণার উপর ভিত্তিকরে তৈরি করেন এই ধরনের কম্পিউটার। এই প্রথম কম্পিউটারে বাইরে থেকে প্রদেয় তথ্যাবলী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হল। এই কম্পিউটারের পুরো নাম ছিল Electronic Delay Storage Automatic Computer সংক্ষেপে EDSAC।
এই কম্পিউটারের সাহায্যে সংরক্ষিত প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাজ করার সুবিধা থাকাতে প্রত্যেকবার নতুন প্রোগ্রাম চালু করার জন্য বৈদ্যুতিক সংযোগ বিন্যস্ত করা বা বারবার প্রয়োগ করার জন্য সংকেত প্রদান বা নিয়ন্ত্রের ঝামেলা খুবই কম ছিল। অর্থাৎ কম্পিউটারের স্মৃতিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী আগে থেকেই প্রোগ্রাম আকারে প্রবেশ করিয়ে দেয়া যেত। এই কম্পিউটারটি তার স্বাভাবিক দ্রুততার সাথে ১৫,০০০ মাইক্রোসেকেন্ডে যোগ এবং ৪০০০ মাইক্রোসেকেন্ডে গুনের কাজ করতে পারতো। কম্পিউটার গবেষকদের মতে উক্ত EDSAC নামের কম্পিউটারটি বিশ্বের প্রথম সংরক্ষিত প্রোগ্রামবিশিষ্ট ইলেকট্রনিক কম্পিউটার হিসেবে বিবেচিত।
Related: উত্তরঃ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে আমরা যে সব প্রশ্ন করে থাকি
এডভ্যাক EDVAC : পূর্বের অবিজ্ঞতা আর উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি (মতান্তরে ১৯৫১ সালে) আবিষ্কৃত হয় EDVAC নামের কম্পিউটারটি। মূলত Electronic Discrete Variable Automatic Computer-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো EDVAC। তথ্য গ্রহণ এবং তার ফলাফল প্রদানের ক্ষেত্রে দ্রুততার পরিচয় দিতে পারল কম্পিউটারটি। কারণ, প্রথমবারের মত ডাটা বা উপাত্ত সংরক্ষণ করা এবং সংরক্ষণকৃত ডাটা বা উপাত্তের ভিত্তিতে যৌক্তিক পদ্ধতিতে ফলাফল প্রদানের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হলো কম্পিউটার নামক যন্ত্রটিতে। কারণ, এই প্রথম কম্পিউটারে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত বা Logical Decision নেবার ক্ষমতা যুক্ত করা সম্ভব হলো।
ইউনিভ্যাক UNIVAC: এডভ্যাক কম্পিউটার তৈরিতে বিভিন্ন গবেষকরা উৎসাহী হয়ে পড়ে। ইতিপূর্বে ১৯৪৬ সালে প্রেসপার একার্ট এবং জন মউসলি দুজনে মিলে একটি কোম্পানী গঠন করেন। তাদের দ্বৈত প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে তৈরি হয় UNIVAC-1 নামের কম্পিউটারটি। এই কম্পিউটারটি আমেরিকার সেন্সাস ব্যুরোতে স্থাপন করা হয়। এই সময় আমেরিকার সেন্সাস ব্যুরোতে আইবিএম কোম্পানীর পাঞ্চকার্ড সহযোগে কম্পিউটার ব্যবহৃত হতো। কর্তৃপক্ষ উক্ত সক ল আইবিএম সম্পর্কিত যন্ত্রাংশ পরিহার করে UNIVAC-1 নামক কম্পিউটারটি ব্যবহর শুরু করে। পরবর্তী ১২ বছর পর্যন্ত উক্ত কম্পিউটারটি সেন্সাস ব্যুরোতে ব্যবহৃত হয়েছে।
IBM-701 এবং IBM-650 : এই সময়ে আইবিএম কোম্পানীর তৎকালীন কর্ণধার টমাস ওয়াটসন (Tomas Watson) ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আইবিএম কম্পিউটার তৈরিতে উৎসাহী হন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালের শেষ দিকে IBM-701 এবং IBM-650 নামের দুটো ব্রান্ড কম্পিউটার প্রবর্তন করতে সক্ষম হন। এই কম্পিউটারে প্রথম বাইরে থেকে তৈরি প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
মোটামুটিভাবে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর মধ্যে IBM-650 নামের কম্পিউটারটিকে বাণিজ্যিকভাবে সফল বিক্রিত কম্পিউটার হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ, সেই সময় এই কম্পিউটারটি কয়েক হাজার পিস বিক্রয় করা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তী ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত উন্নত বিশ্বের হাজার হাজার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসার বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য IBM-650 নামের কম্পিউটারট কেনার প্রতি উৎসাহী হন। মূলত এইসময় থেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কম্পিউটার তৈরির একটা পথ উন্মুক্ত হয়। কারণ, কম্পিউটার তৈরির পাশাপাশি এতে ব্যবহারযোগ্য কিছু প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার তৈরি ও প্রবর্তন করা হয়। এইসময় প্রোগ্রাম তৈরি বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কারণ, প্রোগ্রাম তৈরিতে বিশেষজ্ঞ ছিল না। এই সময় প্রোগ্রাম রচনায় ব্যবহৃত হতো সংকেত। ফলে আন্তর্জাতিক মান সম্পর্কে বেশির ভাগ সময় দ্বিমত তৈরি হতো।
Related: Television আবিষ্কার ও তার পেছনের মানুষগুলো ১ম পর্ব
তবে এইসময় ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলোতে বিদ্যুতের খরচ ছিল অনেক বেশি। কারণ, সবগুলো কম্পিউটারে ব্যবহৃত হতো ভালব বা ভ্যাকুয়াম টিউব। এগুলোতে প্রচুর বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হত। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় এই ভ্যাকুয়াম টিউব নষ্ট হয়ে যেত ফলে সেগুলোকে বদলানোর ঝাক্কিটাও সামলাতে হতো ব্যবহারকারীকে।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট
উপরের আলোচনার সাপেক্ষে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউতারগুলোর কিছু বৈশিষ্ট লক্ষ্যনীয়।
(১) এই সময়ের কম্পিউটারগুলো আকারে অনেক বড় ছিল।
(২) কম্পিউটারগুলোতে ভ্যাকুয়াম ব্যবহারের কারণে সেগুলো গরম ও নষ্ট হতো।
(৩) কম্পিউটারগুলোতে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হতো।
(৪) তথ্য ধারণ এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা ছিল অতি সীমিত পর্যায়ের।
(৫) এইসময় প্রোগ্রাম তৈরি ছিল কষ্টসাধ্য কারণ সেই সময় প্রোগ্রাম রচনায় ব্যবহৃত হতো সংকেত- যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকলের সাথে একমত ছিল না।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের অসুবিধাসমূহ
বর্তমান প্রজন্মের কম্পিউটারের বিভিন্ন সুবিধার আলোকে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করা যায়।
(১) কম্পিউটারের চালনা শক্তি অত্যন্ত ধীরগতির ছিল।
(২) কম্পিউটারের বৈদ্যুতিক শক্তির যোগান অত্যন্ত বেশি ছিল।
(৩) এই সময়ের কম্পিউটারগুলো ঘন ঘন নষ্ট হতো।
(৪) কম্পিউটার স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান করতে হতো।
(৫) এই সময়ের তৈরিকৃত প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের কোয়ালিটি বা বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত নিম্নমানের ছিল।
কম্পিউটারের দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫৯ থেকে ১৯৬৫)
১৯৫৯ সালের শেষ দিক থেকেই মূলত কম্পিউটারের দ্বিতীয় প্রজন্মের সূত্রপাত ঘটে। কারণ, এই সময় কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউবের বদলে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার শুরু হয়। ভালবের চেয়ে ট্রানজিস্টর আকারে ছোট হওয়ার কারণে কম্পিউটারের আকার ছোত হতে শুরু করে। এছাড়া, এই কম্পিউটারে বিদ্যুতশক্তির যোগানও আগের তুলনায় অনেক কম প্রয়োগ করতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা উৎপাদন খরচ হ্রাস পাওয়ার কারণে এইসময়ের কম্পিউটারগুলোর মূল্য আশাতীত ভাবে কমতে শুরু করে। ফলে সাধারণের মধ্যে কম্পিউটারের ব্যবহারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
Related: মানুষ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর রেডিও সম্পর্কে মিথ্যাটাই জানে
এইসময় কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা বা Central Processing Unit (CPU) এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা (Programming Language) সম্পর্কে নতুন নতুন ধারণা প্রবর্তন ঘটে। এই সময় COBOL, FORTRAN নামের বিখ্যাত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রবর্তনের সূচনা হয়। এইসাথে কম্পিউটারে তথ্য প্রবেশ করানো বা কম্পিউটার থেকে তথ্যাদি প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইনপুট (Input Unit) এবং আউটপুট (Output) ইউনিট প্রবর্তনের সূচনা হয়।
যদিও ১৯৪৭ সালেই আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে জন বারডিন (John Bardeen) ও উইলিয়াম শকলে (William Shockley) এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন (Walter Brattain) নামের তিন প্রতিভাবান গবেষক ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন করেন।
Photo: Apple Computer
তবে সেইসময় এগুলোর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়নি। পরবর্তীতে কম্পিউটারের দ্বিতীয় প্রজন্মের সময়কালে উক্ত ট্রানজিস্টর সার্থকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এইসময় তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চৌম্বক কোরের ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। এইসময়ের কম্পিউটারগুলোর উদাহরণ হিসেবে নিচের কম্পিউটারগুলোর নাম সর্বাগ্রে লক্ষ্যনীয়।
আইবিএম–১৬২০ বা IBM-1620 : আগেকার আইবিএম কম্পিউটারগুলোর চেয়ে এই কম্পিউটার আকারে বেশ ছোট এবং সহজ ও স্বাভাবিক ব্যবহার উপযোগী। এই প্রজাতির কম্পিউতারগুলো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। এইসময় CDC-3600 নামের এক প্রজাতির কম্পিউটার বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হতো।
আইবিএম–১৪০১ বা IBM-1401: এই প্রজাতির কম্পিউটারগুলো ছোট, হালকা ও সহজে স্থাপনযোগ্য হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার এই প্রজাতির কম্পিউটারগুলোকে ব্যবপকভাবে প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছে। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক এবং গবেষণার কাজে নিম্নোক্ত কম্পিউটারগুলো দ্বিতীয় প্রজন্মে উদ্ভাবিত এবং ব্যবহৃত হয়েছে ব্যাপকভাবে।
সিডিসি-১৬০৪ (CDC-1604), আরসিএ-৩০১ (RCA-301), আরসিএ-৫০১ (RCA-501), এনসিআর-৩০০ (NCR-300), আইবিএম-১৪০০ (IBM-1400), আইবিএম-১৬০০ (IBM-1600) ইত্যাদি।
এই কম্পিউটারগুলোর বেশিরভাগ ব্যবহৃত হত বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে। যেহেতু এই সময়েই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের প্রবর্তন ও ব্যবহার শুরু হয় সুতরাং বলা চলে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার থেকেই মানুষ কম্পিউটারের ব্যবহারের প্রতি আরও বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যাবলী
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যাবলী লক্ষ্যনীয়
(১) ট্রানজিস্টর ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের আকার ও আকৃতি ছোট হয়ে যাওয়া।
(২) বিদ্যুতের অপচয় আগে থেকে অত্যন্ত কম হওয়া।
(৩) তথ্য প্রকৃয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের চৌম্বকীয় কোর ব্যবহার।
(৪) বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন COBOL, FORTRAN ইত্যাদির উদ্ভাবন ও ব্যবহার।
(৫) কম উত্তপ্ত ও বিদ্যুৎ খরচ কম হওয়ার কারণে কাজের গতিবৃদ্ধি হওয়া।
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।