ব্যারোমিটার কিভাবে আবিষ্কার হল ?
মহাবিজ্ঞানী গ্যালিলিওর প্রিয় শিষ্য টরেসেলি ছিলেন ব্যারোমিটার এর আবিষ্কারক। তবে ব্যারোমিটার আবিষ্কার করার জন্য টরেসেলি মানষিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। বলা হয় তার গুরু গ্যালিলিও এই দায়িত্বটা তার উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এটাও একটা গল্পের মত কাহিনী।
এক ধনী ভদ্রলোক খুব গভীর একটা কুপ খননের জন্য কিছু লোককে নিয়োগ করেছিলেন। লোকগুলো মাটি খুঁড়তো আর চুইয়ে আসা পানি পাম্প বসিয়ে উপরে বার করে দিতো। তারপর আবার খুঁড়তো। কয়েকদিন খোঁড়ার পরে ভয়ানক অসুবিধায় পরলো খননকারীরা। এবার পাম্প ঠেকিয়ে তলা থেকে একটুও পানি বাহিরে আনা গেল না। লোকগুলো অসুবিধার কথা জানাতে ভদ্রলোক কারণটা সম্বন্ধে খুব করে ভাবলেন, দু-দশ জনকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু ব্যপারটা আদৌ ধরতে পারলেন না।
Related: রেডিও আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিক করুন।
ভদ্রলোক তখন অনেক ভেবে-চিন্তে একদিন হাজির হলেন তখনকার সেরা বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর কাছে। গ্যালিলিও তখন অতি বৃদ্ধ।
তার উপর অন্ধ হয়ে পড়েছেন এবং কোন কিছুকে নিয়ে ভালভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাও হারিয়েছেন। তাই প্রিয় শিষ্য টরেসেলিকেই কারণটা অনুসন্ধানের জন্য ভার দিলেন। ব্যাপার কি তা জানার জন্য সেই ধনী ব্যাক্তি ছুটে যান গ্যালিলিওর কাছে। গ্যালিলিওকে সব কথা খুলে বলেন। কিন্তু সে সময় গ্যালিলিও ছিলেন অন্ধ আর বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। কাজ করা সম্ভব ছিলনা তার পক্ষে। তিনি তাই পাম্প মেসিনে পানি কেন উঠছে না তা বের করার দায়িত্ব দিলেন টরেসেলিকে।
টরেসেলি ছুটে যান সেই কুয়োর সামনে। কুয়োর ভেতর একটা দড়ি ফেলে দেখতে পান কুয়ো কাটা হয়েছে চৌত্রিশ ফুট। এবার একটা বালতিতে পানি নিয়ে দড়ি বেঁধে কুয়োর তলা থেকে সামান্য উপরে ঝুলিয়ে রেখে তাতে পাম্প মেসিনের পাইপ রেখে দেখতে পান মেসিন ঠিক আছে এবং পানি তুলতে পারছে। অথচ বালতিটা একটু নামিয়ে দিলেই পাম্প মেসিনে আর তোলা যাচ্ছে না। এ থেকে টরেসেলি একটা কথা বুঝলেন, ৩৪ ফুট নিচ থেকে প্রচলিত কোন পাম্প মেসিনে পানি তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু কেন তোলা সম্ভব হচ্ছে না? সমস্যাটা কোথায়? তবে কি এ জন্য বাতাসের চাপ দায়ী? বাতাসই কি পানিকে ৩৪ ফুটের উপরে উঠতে দিচ্ছে না? দেখা যাক পরীক্ষা করে। টরেসেলি দেখেশুনে খুব বিস্ময়বোধ করলেন। বারে বারে একই প্রশ্ন তাঁর। মনে এলো, কেন চৌত্রিশ ফুটের বেশি গভীরতা থেকে পাম্প দিয়ে পানি তোলা যাচ্ছে না? কোথায় রয়েছে এর প্রতিবদ্ধকতা?
Related: মোবাইল ফোন কি এবং কিভাবে কাজ করে
বাড়িতে ফিরে এসে টরেসেলি এক মিটার লম্বা ও এক মুখ খোলা একটা কাঁচের নল নিয়ে তার ভেতর পানির চেয়ে সাড়ে তেরো গুন ভারি তরল পারদ ঢুকিয়ে নলটিকে একটি পারদপূর্ণ পাত্রে উপুর করে রাখেন। অবাক কাণ্ড! তিনি দেখতে পান নলের ভেতরের পারদ ধীরে ধীরে নেমে ২৯ ইঞ্চি বা ৭৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় এসে স্থির হয়ে আছে, আর নামছে না।
আশ্চার্য হলেন টরেসেলি। নলের ভেতরের পারদটা ভর্তি হয়ে থাকলো না বা সম্পুর্ণভাবে নেমেও পড়লো না। ধীরে ধীরে নেমে আসতে আসতে ছিয়াত্তর সেন্টিমিটার উচ্চতায় একে বারে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। টরিসেলি এবার বুঝতে পারলেন, বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর উপর যে চাপটা প্রদান করছে, সেই চাপ ছিয়াত্তর সেন্টিমিটার পারদস্তম্ভকে ধরে রাখতে পারে। যেহেতু পানির চেয়ে পারদ 13.6 গুন ভারী, তাই 13.6×76 সেন্টিমিটার বা 34 ফুট উচ্চ পানিস্তম্ভকে যে ধরে রাখতে সক্ষম।
এ পরীক্ষার মাধ্যমে টরিসেলি একটি কথা বুঝতে পারেন, বায়ুমণ্ডলের চাপ 76 সেন্টিমিটার উচ্চতায় পারদকে ধরে রাখতে পারে। যেহেতু পারদ পানির চেয়ে 13.6 গুণ ভারী তাই বায়ুমণ্ডল প্রায় 29×13.6=3944 ইঞ্চি বা 34 পর্যন্ত পানিকে ধরে রাখতে পারে এবং 34 ফুটের মধ্যে কার্যক্ষম থাকে।
Related: মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিক করুন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টরিসেলির মন বায়ুর চাপ সব সময় সমান থাকে কিনা, কিংবা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঐ চাপ কেমন, পাহাড়ের উপর কিংবা খনিগর্ভে চাপের তারতম্য ঘটে কিনা, ইত্যাদি জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে। টরিসেলি ছিলেন বুদ্ধিমান। তিনি ভাবেন, এই যন্ত্রটিকে বায়ুমণ্ডলের চাপ পরীক্ষা করার কাজে লাগানো যেতে পারে। সে উদ্দেশ্যে তিনি তৈরি করেন উন্নতমানের কাঁটাওয়ালা একটি যন্ত্র। এ যন্ত্রটির নাম রাখা হয় ব্যারোমিটার।
এই ব্যারোমিটার যন্ত্রটির প্রধান উপকরণ হচ্ছে সেই পারদ পাত্র এবং তার উপর উপুড় করে রাখা পারদ ভর্তি এক মিটার লম্বা একটা সরু কাঁচের নল। ওটিকে যাতে সহজে বন্ধ করা যায় বা স্থির ভাবে রেখে দেওয়া যায়, তার জন্য যান্ত্রিক ব্যাবস্থা থাকে।
সুত্রঃ বিজ্ঞানীদের জীবনি আবিষ্কারের কথা।